রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী এক নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেছে এলাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। হামলায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আলী হোসেন, শ্যামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল দত্ত অপু ও কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এসআই উৎপল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
অপর দুই পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পুলিশ মোটরসাইকেলচালক রনি, তাঁর স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশাত ভুইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভুইয়াকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী বলছে, মোটরসাইকেল থামানো নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে নিশাত ভুইয়ার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন। এক পর্যায় নিশাতকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে মারধর করা হয়। সেখানে মোটরসাইকেল আরোহী ওই নারীর চিৎকারে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করে। সার্জেন্ট আলী হোসেনের বিরুদ্ধে যানবাহন থামিয়ে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করে এলাকাবাসী বলছে, অনেক দিনের ক্ষোভের কারণে লোকজন এই হামলায় অংশ নিয়েছে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, উল্টো পথে চালানো মোটরসাইকেল আটকে কাগজপত্র দেখতে চান সার্জেন্ট আলী হোসেন। এ ঘটনায় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে লোকজন জড়ো করে পুলিশ বক্সে হামলা করা হয়। এসআই উৎপল দত্তের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আহত আলী হোসেনের শরীরে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখারুল আলম বলেন, গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টো পথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলে এক নারীসহ দুজন আরোহী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেলের চালক দুর্ব্যবহার শুরু করেন। তাঁরা পোশাক পরা অবস্থায় অন ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে ওই নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশপাশে থাকা লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে মারধর করে এবং পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত মোটরসাইকেলচালক সার্জেন্টের বুকের ওপর পা তুলে চেপে বসে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসা জনতার মধ্যে থেকে একজন সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করে।
তিনি আরো বলেন, সার্জেন্টকে উদ্ধারে আসা পুলিশ সদস্যদের মারধর ও ধাওয়া করা হয়। পরে শ্যামপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে মোটরসাইকেলচালক রনি বার্তা বিচিত্রা নামক পত্রিকার সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী নিশাত ভুইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভুইয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদেরও অপরাধ আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।
আটক নিশাত ভুইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোটরসাইকেলের কাগজ দেখানোর পরও মামলা দিয়ে আটক করতে চায়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে সার্জেন্ট আলী হোসেন গায়ে হাত তোলেন। ’ বিনা কারণে বক্সে এনে আটকে রাখে বলে দাবি করেন নিশাত।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামের জুরাইনের এক বাসিন্দা বলেন, রেলগেট এলাকায় রিকশা, রিকশাভ্যান, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়ি, ছোট পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন অকারণে আটকে হয়রানি করেন সার্জেন্ট আলী হোসেন। এ কারণে অনেকে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। ওই নারীর অভিযোগ সবাই বিশ্বাস করে সেখানে হামলা করেছে।
মঞ্জুরুলের মতোই আরো কয়েকজন বলেন, ওই নারীকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকে জড়ো হয়ে সার্জেন্ট আলীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়ে। কিছু মানুষ ছিল ওই নারীর আত্মীয়-স্বজন।
শ্যামপুর থানার ওসি মফিজুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তর্কাতর্কি দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এ জাতীয় আরো খবর..