×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-০৪
  • ৯১ বার পঠিত
দিনাজপুরে ধান (২৮ ধান) কেনা থেকে মোটা চাল তৈরি পর্যন্ত প্রতি কেজিতে মোট খরচ ৪৮ টাকা। চিকন চালে (মিনিকেট) খরচ ৫২ টাকা। খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৫৫ টাকা। চিকন চাল বিক্রি হয় ৬২ টাকায়।


সে হিসাবে উৎপাদন পর্যায় থেকে খুচরায় প্রতি কেজি চালের দামের ফারাক সাত থেকে ১০ টাকা।
ধান-চালের অবৈধ মজুদদারির বিরুদ্ধে পাঁচ দিন ধরে সরকারি অভিযান শুরুর পর কেজিতে দাম এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। মিল মালিকরা বলছেন, সংকটের কারণে চিকন ধানের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। এতে বেড়েছে চালের দাম।

লাফিজুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন আগে ধানের দাম বাড়তি ছিল। এ জন্য চালের দাম বেড়ে যায়। অবশ্য এখন ধানের দাম প্রতি বস্তায় (৭৫ কেজি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। এতে সামনে চালের দাম কমে যাবে। এ ছাড়া চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চারটি পর্যায়ে হাতবদলকে তিনি দায়ী করেন। তিনি বলেন, প্রথমত কৃষকের কাছ থেকে যাঁরা ধান কেনেন, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই মিল নেই। তাঁরা ধান কিনে মিলে নিয়ে চাল তৈরি করেন। এরপর ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করেন। ফড়িয়ারা খুচরা বাজারে চাল বিক্রি করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুরুল হক বলেন, এখন ধানের ভরা মৌসুম। কোনো সংকট নেই। এ ছাড়া কিছু ধান এখনো কাটা বাকি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুরে বর্তমান বাজারে ‘২৮ ধান’ (মোটা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ (সাড়ে ৩৭ কেজি) ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। একইভাবে চিকন ধান ৯৫০ থেকে ১০০০, ‘২৯ ধান’ ১৯০০ থেকে ২০৫০ এবং স্বর্ণা ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী এক মণ ধান শুকাতে ও সিদ্ধ করতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পরিবহনে ৬০ থেকে ৮০, ছাঁটাইয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ হয়। এভাবে চাল তৈরিতে মোট খরচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। এক মণ ধানে চাল হয় ২২ থেকে ২৩ কেজি। ধান ছাঁটাইয়ের পর গুঁড়া পাওয়া যায় ১০ থেকে ১৫ কেজি। প্রতি কেজি ১২ টাকা।     

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘২৮ ধান’ থেকে প্রতি কেজি চাল তৈরির পর মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। প্রতি বস্তার (৫০ কেজি) দাম দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ২৪০০ টাকা। একইভাবে প্রতি কেজি চিকন (মিনিকেট) চালের দাম পড়ে প্রায় ৫২ টাকা। প্রতি বস্তার দাম পড়ে ২৬০০ টাকা। এ ছাড়া চালের কুঁড়া বিক্রি করে মিল মালিকের আয় হয়।

এদিকে জেলা শহরের বাহাদুর বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযান শুরুর আগে ‘২৮ চাল’ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) দাম ছিল দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৭৫০ টাকা। একইভাবে ‘মিনিকেট চাল’ প্রতি বস্তা ছিল দুই হাজার ৯৫০ থেকে তিন হাজার ১৫০ টাকা, ‘২৯ চালের’ দাম ছিল দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা এবং স্বর্ণা জাতের চালের দাম ছিল দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫৩০ টাকা।

জেলার বাহাদুর বাজারে চাল ব্যবসায়ীরা জানান, অভিযান শুরুর পর থেকে বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি কমেছে অন্তত ৫০ টাকা। বাজারে ২৮ চাল (মোটা) প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ থেকে ২৭০০ টাকা। একইভাবে ‘মিনিকেট’ বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ থেকে ৩১০০, ‘২৯ চাল’ ২৪৫০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং স্বর্ণা জাতের চাল ২৪৫০ থেকে ২৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাহাদুর বাজার এলাকার রাকিব ট্রেডার্স নামের এক চাল দোকানের ম্যানেজার আমজাদ আলী বলেন, বাজারে কয়েক দিন আগে চাল ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না। অভিযানের পর চালের দাম ৫০ টাকা কমেছে। কিন্তু চাল আগের মতো সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

একই বাজারের নিশান চাল ঘরের স্বত্বাধিকারী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ধরাধরিতে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। আমরা দুই টাকা লাভের আশায় ব্যবসা করি। যা কিনব তার থেকে দুই টাকা লাভে বিক্রি করব। ’

এদিকে কুষ্টিয়ার মিল মালিকরা জানান, বর্তমানে এক মণ ধান ১৪৫০ টাকায় কিনে চাল হয় ২৪ কেজি। এর সঙ্গে ১১০ টাকা উৎপাদন খরচ এবং ৫৫ টাকা বস্তার দামসহ ২৪ কেজি চালের দাম হয় ১৫৬৩ টাকা। কেজিতে দাম পড়ে প্রায় ৬৭ টাকা। তারপর মিল মালিকদের খুদ ও কুঁড়া অবশিষ্ট থাকে। মিল মালিকরা এক মণ ধানে ২৪ কেজি চালের কথা বললেও জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এক মণ ধানে ২৬ কেজি চাল হয়। কুষ্টিয়া সদর গুদামের খাদ্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ধান ভালো হলে এক মণে ২৭ কেজি চালও হয়।

বৃহস্পতিবার খাজানগর মোকামের একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে বছরখানেক আগে কোনো কারণ ছাড়াই চিকনসহ সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছিল। এরপর মাসখানেক আগে ধানের দাম বাড়ায় নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় মিল গেটে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ধানের দাম বাড়লে চালের মূল্যে সমন্বয় করতেই দাম বাড়ানো হয় বলে মিল মালিকরা জানান।

চালকল মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, বাসমতি, মিনিকেট, কাজললতা ও স্বর্ণা ধানের দাম প্রতি মণে গড়ে ১৫০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে চালের দামে সমন্বয় করা হয়েছে।

অভিযানের মুখে নওগাঁর খুচরা বাজারগুলোতে চালের দাম দুই-তিন টাকা কমেছে। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন, সরকারের অভিযানের প্রভাবে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ টাকা কমিয়ে পাইকারি বাজার ও মিল গেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে খুচরায় কেজিতে দুই-তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে।

জেলার রানীনগর উপজেলার ধান ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, তিন-চার দিন থেকে হাটগুলোয় ধানের আমদানি কমে গেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ধান বাজারে তুলছেন না।

জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে করে এই সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই কমতে শুরু করবে সব ধরনের চালের দাম। যত দিন চালের বাজার স্থির না হচ্ছে এবং সরকার যত দিন এই অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেবে তত দিন এই অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।

মজুদবিরোধী অভিযানে জরিমানা

বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধভাবে মজুদ ঠেকাতে গতকাল শুক্রবারও সারা দেশে অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে তিন লাখ ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, হাজারীবাগ, শান্তিনগর ফকিরাপুল বাজারে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স না থাকায় ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মাদারীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স না থাকা, লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ নানা অপরাধে তিন লাখ ২৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তবে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ মজুদ পাওয়া যায়নি। সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat