×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১৫
  • ৪৭ বার পঠিত
রাজস্ব আহরণের অপর্যাপ্ততা, সরকারি ব্যয় সংকোচনে ব্যর্থতা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এবং ব্যাংক খাত থেকে সরকারের উচ্চমাত্রায় ঋণ দেশের অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে সমস্যার সমাধানের সুপারিশ করেছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষক হিসেবে আলাদা একটি প্ল্যাটফরম করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে সুধীসমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, রপ্তানি আয়ে ধীরগতি, রেমিট্যান্সপ্রবাহে মন্থরতা, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতার মতো সমস্যাগুলোর দ্রুত অবসান করতে হবে। অর্থনীতির গতি আনতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবক্ষয়, আমদানিতে ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা, টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।

সামাজিক খাত পুনর্গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শ্রমবাজারের চাহিদা ও দক্ষতার অসামঞ্জস্য দূর করার তাগিদ দেন তিনি। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার সংস্কার কার্যক্রম যেন হারিয়ে না যায় সে জন্য প্ল্যাটফরম থাকতে হবে। অনেকে বিভিন্ন কমিশন করার কথা বলছেন। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন দেশে রয়েছে।

অনেক আইনও আছে। অথচ এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা প্ল্যাটফরম খুবই প্রয়োজন। এটি করতে হলে যে শিক্ষার্থীরা এ অভ্যুত্থান করল তাদের উপস্থিতি জরুরি।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আন্দোলনের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে।

দেশের মানুষ যত দিন চাইবে, তত দিন আমাদের সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা সবার আগে ঠিক করা দরকার। এরপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংস্কার প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি গোয়েন্দা বিভাগের দিকে নজর দেওয়া উচিত। আমাদের যখন তুলে নেওয়া হয়, তখন গোয়েন্দা বিভাগের দুর্নীতি নজরে এসেছে। একটা আয়নাঘরের খবর জেনেছি। গোয়েন্দা বিভাগে আর কোনো আয়নাঘর আছে কি না সেটা দেখা দরকার।’
ক্যাডার বাহিনী তৈরি করবেন না আহ্বান জানিয়ে তাবাসসুম বলেন, ‘আমাদের এমন সিস্টেম থাকা দরকার, কোনো সরকারই যেন ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে না পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা এমন সিস্টেম তৈরি করুন, যাতে কেনো দল বা সরকার ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে না পারে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আর রাষ্ট্রীয় বাহিনী থাকেনি। দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন, অনেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। কারা হেফাজতে আছেন তা জানা দরকার। কারণ যদি গ্রেপ্তার হয়ে থাকেন, তাহলে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাঁরা হেফাজতে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হোক। তাঁরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

প্রত্যেক ব্যাংক পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বর্তমান পরিচালক শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, সব ব্যাংক পরিচালকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে হবে। তাঁদের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তাঁরা পাই পাই করে প্রত্যেকটি টাকার হিসাব দেবেন, এরপর ছাড়া পাবেন। টাকার হিসাব দিয়ে তাঁরা বিদেশ যেতে পারবেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা ১৫ বছর পুলিশি রাষ্ট্রে বসবাস করেছিলাম। ব্যাংক খাতের ক্ষত অনেক গভীর। ব্যাংক খাত সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, অর্থনৈতিক লুটপাট আরো বেশি। ব্যাংক নিয়ে হাজারটা রেগুলেশন তৈরির ইতিহাস পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি। ৫০ বছর পরও এখনো ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হয়, এটা লজ্জার।’

অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে স্বৈরাচারী হওয়ার অনেক উপাদান আছে, এগুলো বাদ দিতে হবে। এগুলো রাজনৈতিক দলের হাতে ছেড়ে দিলে আমরা ব্ল্যাকহোলে পড়ে যাব। স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আলাদা করতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই সরকারকে নতুন করে সংবিধান লিখে যেতে হবে। তারা হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারবে না। পরবর্তী সরকারের জন্য এই সংবিধান লিখে যেতে হবে, যাতে তারা বাস্তবায়ন করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat