×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১১
  • ৩৯ বার পঠিত
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়লেন ওবায়দুল হাসান। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে শত শত আন্দোলনকারী গতকাল শনিবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আঙিনার ভেতর অবস্থান নিলে দুপুরে তিনি পদত্যাগ করেন। এর পরপরই আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকও পদত্যাগ করেন। তাঁরা সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদের অধীনে পদত্যাগ করেন বলে গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দুপুর আড়াইটার দিকে ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য একটি বিশেষ সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার করার তাগিদ অনুভব করছি। আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে।

এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের (প্রক্রিয়ার) জন্য আমরা কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব এবং আশা করব যে খুব দ্রুত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’ তখন পর্যন্ত তিনি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানান।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাঁর পদত্যাগপত্রে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডগুলো রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেস টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা, জেলা জজকোর্টগুলো ও রেকর্ডরুমগুলো রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই (পদত্যাগের) সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’

গত ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়।

এই আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। পরদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যায় কি না এবং সে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের শপথ পড়ানোর ক্ষেত্রে সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠান রাষ্ট্রপ্রধান। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে শুনানি করে মতামত দেন।

সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করা এবং দেশের নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যেতে পারে এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথ পড়াতে পারেন বলে মতামত দেন আপিল বিভাগ। এ মতামত রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপ্রধান। 

পদত্যাগের আলটিমেটাম

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম গত ৭ আগস্ট স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। যথারীতি ৮ আগস্ট বিচারকাজে বসেননি সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা করার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। এদিকে ফুলকোর্ট সভা স্থগিতের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে আসার আগেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শত শত কর্মী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন। দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দুপুর ১টার মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁদের আমরা গণভবন-সংসদ ভবনের চিত্র মনে করিয়ে দিতে চাই। আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই, দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগ করবেন এবং এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের সমূল উৎপাটন ঘটবে। যদি তাঁরা এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁদের বাসভবন ঘেরাও করা হবে।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সময় ছাত্র-নাগরিকদের হাইকোর্ট, জেলা আদালত ঘেরাওয়েরও আহবান জানান। সাড়ে তিন ঘণ্টা বিক্ষোভের সময় সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন স্থাপনার সামনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা ও নৌ সদস্যের সশস্ত্র অবস্থান ছিল। পরে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবর প্রকাশ হলে ধীরে ধীরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা।

আরো ৫ বিচারপতির পদত্যাগ

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর গতকাল বিকেলে আপিল বিভাগের আরো পাঁচ বিচারপতির পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র। পদত্যাগ করা বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো। পদত্যাগ করা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর পদত্যাগপত্রে বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে পদত্যাগ করার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের পদত্যাগের খবর জানাতে পারেনি এসব সূত্র। গুঞ্জন  শোনা যায়, তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এমন গুঞ্জনের মধ্যে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি ঘোষণার দাবি জানান। পরে তাঁকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat