×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৭-১৩
  • ৬৭ বার পঠিত
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘দুর্নীতি দুর্নীতিই, সেই দুর্নীতি হোক পিয়নের বা আমার। সব দুর্নীতি দূর হোক। দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক।’  দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির এক পর্যায়ে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ২০০৭ সালে দুদকের করা মামলায় তিতাস গ্যাসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায়ে দুই আসামিকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিতরা। শুনানির পর সেই আপিল মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতের রায় বাতিলের ওই রায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা নির্মূলে অভিমত ব্যক্ত করার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জাতীয় সংসদের উদ্দেশে কিছু কথা বলেছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া দুদকের জন্য একটি স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করে তার মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগের কথা বলা হয়। কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড গঠনের পরামর্শ দেন উচ্চ আদালত। এ ছাড়া নিয়োগের পর কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থেকে সদস্য নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে আলাদা প্রসিকিউশন প্যানেল গঠনের পরামর্শ দিয়ে রায়ে বলা হয়, তিন বছর পর পর এসব প্যানেল পুনর্গঠন করতে হবে এবং আইনজীবীদের উপযুক্ত সম্মানী ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, জাতীয় সংসদ পরামর্শগুলো গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। পরে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে দুদক। চেম্বার আদালতে এই আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট রায়টি স্থগিত করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সেই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে দুদককে আপিলের অনুমতি দিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
শুনানিতে আইনজীবী কাজল বলেন, হাইকোর্ট দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের স্বার্থেই এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা (আদালত) সংসদকে পরামর্শ দিতে যাব কেন? আমরা কি সংসদকে পরামর্শ দিতে পারি? হাইকোর্ট নির্বাহী বিভাগকে, সরকারকে নির্দেশনা দিতে পারেন।’ বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চাইলে সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সেই পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, আবার না-ও পারেন।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘গত (১০ জুলাই) রাতে আমরা হাইকোর্টের দুই কর্মচারীকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারা বিচারপতির নাম ভাঙিয়ে ঘুষ নিয়েছিল। দুর্নীতি দুর্নীতিই। সেই দুর্নীতি হোক পিয়নের বা আমার। সব দুর্নীতি দূর হোক। দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক।’ 

এ সময় প্রধান বিচারপতি কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়েও কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনারা তো সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা। দেশের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে। যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে, তাদের বোঝান, পরামর্শ দিন। তারা (আন্দোলনকারীরা) নির্বাহী বিভাগের (সরকারের) কথা বলছে। নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত তো চ্যালেঞ্জ করা যায়। চ্যালেঞ্জ হলে তো বিষয়টি আবার আদালতের সামনেই আসবে। আদালতকেই নিষ্পত্তি করতে হবে। তারা যথাযথভাবে তাদের বক্তব্য আদালতেই উপস্থাপন করতে পারে। আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সব সময় খোলা।

‘সঠিক ধারণার অভাবে অনেক অকালমৃত্যু’

এদিকে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা এবং সিপিআর প্রশিক্ষণ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এখন সব রোগের চিকিৎসা মানুষ দেশেই নিতে পারছে। কিন্তু এই সফল চিত্রের পাশাপাশি এখনো সচেতনতার অভাবে অনেক মানুষ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই সঠিক জ্ঞানের অভাবে সঠিক চিকিৎসা নিতে না পেরে অকালমৃত্যুবরণ করছে।

গতকাল রাজধানীতে অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা এবং সিপিআর (কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। আইডিপিডি ফাউন্ডেশন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি যৌথভাবে সমিতির মিলনায়তনে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়া একজন মানুষকে প্রাথমিক অবস্থায় কিভাবে সেবা দিতে হবে অনেক ক্ষেত্রেই সে বিষয়ে আশপাশের মানুষদের কোনো ধারণা থাকে না। এ কারণে অনেককে অকালমৃত্যুবরণ করতে হয়। আমি নিশ্চিত এখানে আমরা বেশির ভাগই সিপিআরের সঠিক নিয়মকানুন জানি না। এমনকি আমি নিজেও জানি না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সিপিআর কিংবা এই ধরনের জীবন রক্ষাকারী সাধারণ দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করা এক ধরনের নাগরিক দায়িত্ব। উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের স্কুলেই একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিপিআর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

দেশেও সিপিআর প্রশিক্ষণের বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারকে অনুরোধ করেন প্রধান বিচারপতি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ও আইডিপিডি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী অসংক্রামক ব্যাধির ওপর সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইডিপিডি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহসিন আহমেদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat