×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-২৩
  • ৫৩ বার পঠিত
সরকারী কর্মচারী আচরণবিধিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তার নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনা গুরুতর অপরাধের শামিল। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি ‘বাধ্যতামূলক অবসর, অব্যাহতি অথবা চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং সর্বনিম্ন দণ্ড নিম্ন পদে বা নিম্ন গ্রেডে পদাবনতি-এর যেকোনো একটি। কিন্তু এ নিয়ম মানা হয়নি গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের ক্ষেত্রে। 

কলেজছাত্রী নিয়ে রিসোর্টে দিনের পর দিন রাত্রি যাপন, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা পেতে বিয়ে, এক দিনও সংসার না করে উল্টো তালাকের জন্য হুমকি, জাল কাবিননামা তৈরি করতে কাজিকে ভয় দেখানো ইত্যাদিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো দোষ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।
 
ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ‘ওসিকে নির্দোষ’ উল্লেখ করে গত এপ্রিল মাসে অতি গোপনে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায়। কিন্তু ওসির বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ না থাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার তদন্ত প্রতিবেদন ফেরত পাঠালে ঘটনাটি জানাজানি হয়। 

মানবাধিকারকর্মী ও গাজীপুর আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং আইনের রক্ষক হয়ে তিনি কলেজছাত্রী নিয়ে রিসোর্টে রাত্রিজাপন করে গুরুদণ্ডমূলক জঘন্য অপরাধ করেছেন।

এ ধরনের অপরাধের শাস্তি না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে’। 
নিযার্তিত ছাত্রী ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘প্রথমবার ওসি মিজানুরের প্রতারণার শিকার হয়ে পুলিশ সুপারের কাছে বিচার চেয়েছিলাম। তিনি ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রতারণার সব প্রমাণ তদন্ত কমিটিকে দিয়েছি।

কমিটি কী প্রতিবেদন দিয়েছে জানি না। শুনেছি তদন্ত কমিটি ওসিকে বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। এসপির কাছে বিচার দিয়ে দ্বিতীয়বার প্রতারিত হয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইব।’ 
তিনি শনিবার সাংবাদিকদের কাছে আরো বলেন, ‘রেজিস্ট্রি বিয়ে করে ওসি মানিকগঞ্জে তার সঙ্গে দুই মাস সংসার করেন।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় বদলি হলে শালবন ইকো রিসোর্টে এনে রাখেন। ১০ দিন একসঙ্গে থাকা অবস্থায় গত ১৭ জানুয়ারি হঠাৎ বিয়ে অস্বীকার করেন ওসি মিজান। মানিকগঞ্জ ফিরে যেতে জোরজবরদস্তি ও হত্যাচেষ্টা করেন। ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের সাহায্য চান। ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে তাকে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যায়। প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন করে ওসি মিজান তাকে বিয়ে করেছিল।

বিয়ের পর জানতে পারেন মিজান নেশা করেন এবং একাধিক নারীতে আসক্ত। যেখানেই চাকরি করেছেন, সেখানেই নারী কেলেংকারির জন্ম দিয়েছেন। সব জানিয়ে তিনি এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন। কিন্তু বিচার না করে উল্টো পরদিন মধ্যরাতে জয়দেবপুর কাজি অফিসে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসপি মিজানের সঙ্গে ছাত্রীকে আবার বিয়ে দেন। এসপি তাকে আশ্বস্ত করেছিল, মিজান তাকে পূর্ণ স্ত্রীর মযার্দা দিয়ে সংসার করবে। মিজান নিজেও ক্ষমা চেয়ে আর ভুল হবে না জানায়। 

বিয়েতে ডিবি পুলিশের ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ওসির প্রথম স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর ফের আগের ভয়ংকর রূপে ফিরে যায় মিজান। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় গভীর রাতে ঝর্ণাকে কাজি অফিসে ফেলে রেখে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান ওসি মিজান। পরদিন থেকে ডিভোর্সের জন্য নানা চাপ, হুমকি দিতে থাকেন। এ ঘটনায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টাকা দিয়ে তদন্ত কমিটিকে কিনে ফেলেছেন এমন দম্ভ করেন। একাধিকবার মানিকগঞ্জ এসে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ডিভোর্সের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তদন্ত কমিটির কাছে বিয়ের পরবর্তী সব ঘটনা প্রমাণসহ তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তারপরও ওসিকে বাঁচিয়ে গোপনে গত এপ্রিল মাসে এসপির মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায় তদন্ত কমিটি। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “ওসি তার সঙ্গে সংসার করছেন, মাসে মাসে মানিঅডার্র করে টাকা পাঠাচ্ছেন।” যা সম্পুর্ণ ডাহা মিথ্যা। 

ছাত্রীর মা বলেন, দ্বিতীয়বার বিয়ের পর এক দিনের জন্যও সংসার দূরে থাক, তাঁর মেয়ের খোঁজও নেয়নি ওসি মিজান। কোনো খরচও দেয়নি। তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে মিজানকে ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা করেছে জেলা পুলিশ। বিয়েতে তার মেয়েকে একটা নাকফুল বা একটা জিনিসও দেওয়া হয়নি। মিজান তার মেয়ের জীবনে কলঙ্ক এঁকে দিয়েছে। আর তদন্ত কমিটি ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন তারা। 

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না।’    

কমিটির অন্য একজন সদস্য বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে টাকা পাঠানোর মানি-অডার্রের রসিদ প্রমাণস্বরূপ দিয়েছেন ওসি মিজান। তবে নৈতিক স্খলনজনিত অপারাধের জন্য ওসির শাস্তির সুপারিশসহ কিছু বিষয় উল্লেখ না করায় প্রতিবেদন ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার। ত্রুটিবিচ্যুতি ঠিক করে অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদন আবার পাঠানো হবে। 

এসব বিষয়ে জানতে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলমের ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat