×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-১৯
  • ৫৫ বার পঠিত
গত কয়েক দিনের অবিরত হালকা ও ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২ গ্রাম। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ।

এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে বুধবার (১৯ জুন) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত বৃষ্টি ঝরেছে। এতে খারাপের দিকে যাচ্ছে এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঘরে টিকতে না পেরে বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২২০টি পরিবারের ৬০০ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

যদিও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে বন্যার্ত লোকজন জানিয়েছেন। 
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এরমধ্যে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন সোমবার থেকে বড়লেখায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বাড়ছে। বুধবার (১৯ জুন) সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, সুজানগর, দাসেরবাজার, উত্তর শাহবাজরপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর, নিজবাহাদুরপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ও বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে। 

নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের কবিরা, নোয়াপাড়া, কান্দিগ্রাম, চরিয়া, বিহাইডহর নয়াটিলা, ভাগল, পকুয়া-সুফিনগরের বড় একটা অংশ, গল্লাসাংগন ও নিজবাহাদুরপুরের আংশিক এবং পূর্ব ও পশ্চিম মাইজগ্রামের আংশিক, আদমপুর ও নয়াবস্তি আংশিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে কবিরা, চরিয়া ও নোয়াপাড়ার অবস্থা খুবই নাজুক। এসব এলাকার বেশিরভাগের ঘরে পানি উঠে গেছে। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যদের নিয়ে দুর্গত এলাকায় মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছি। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।  

সরেজমিনে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০টি পরিবার উঠেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও ইউপি সদস্য মকসুদ আহমদ রানা আশ্রিতদের খোঁজ খবর রাখছেন।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বুধবার বিকেলে বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৩০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। পানিবন্দি এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। 

বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় তলিয়ে গেছে। বড়লেখা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আমার ইউনিয়নের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।

তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছ উদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে ১৭৪ হেক্টর আউশ ধান এবং ৭ হেক্টর গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।

বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বন্যার্ত পরিবারের জন্য ঊর্ধ্বতনের কর্তৃপক্ষের নিকট শুকনো খাবারের চাহিদা পাঠিয়েছি। খাবার পাওয়া গেলে তা দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat