ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৭টি মামলার তদন্ত ঝুলেছিল। মে মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৬২২টি।
অর্থাৎ এক মাসে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা কমেছে ৪৩৫টি। এসব মামলায় আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপিতে এখন যে মামলাগুলো তদন্তাধীন (৭ হাজার ৬২২ টি), সেগুলো তিন মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময়ের।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) প্রতিবেদন না পাওয়া মামলা তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। তবে ডিএমপি কমিশনার ‘বিশেষ পদক্ষেপ’ নেওয়ায় গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা কমেছে।
তিন মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটে ৯ হাজার ৩৪টি মামলা তদন্তাধীন ছিল বলে সূত্র জানায়।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমান ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্তাধীন মামলার জট দেখে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সম্প্রতি ডিএমপির সব বিভাগের উপকমিশনারসহ ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তদন্তাধীন মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চান। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মামলাগুলো তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেন। মূলত এরপরই ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট মামলার তদন্ত শেষ করে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করে। ফলে গত এপ্রিলে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫৭টি। পরের মাসে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা চার শতাধিক কমে।
ডিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমসহ (সিটিটিসি) রমনা বিভাগে তদন্তাধীন মামলা ছিল ৯০১টি।
অন্যান্য ইউনিটসহ লালবাগ বিভাগে ৫৪৪টি, ওয়ারীতে ১ হাজার ৮২টি, মতিঝিলে ১ হাজার ৩১০টি, তেজগাঁওয়ে ১ হাজার ৮৪টি, মিরপুরে ১ হাজার ২৩টি, গুলশানে ৮৪৫টি ও উত্তরায় ৮৩৩টি তদন্তাধীন মামলা ছিল। মামলাগুলো মাদক, চুরি, সিঁধেল চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ-পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা যায়।
ডিএমপি সূত্র জানায়, বৈঠকে হাবিবুর রহমান ডিএনএ ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দ্রুত না পাওয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন। হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ অল্প সময়ের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থার কাছে ময়নাতদন্ত-ডিএনএ প্রতিবেদন দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
ডিএমপি কমিশনার থানাগুলোকে দ্রুত মামলা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, একই সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করতে বলেছেন। যেমন ১৫ দিনের মধ্যে অপমৃত্যুর মামলা ও এক মাসের মধ্যে মাদকের মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার মনে করেন, এতে তদন্তাধীন মামলার চাপ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। মামলার চাপ কমে গেলে পুলিশ কর্মকর্তারা অন্য কাজে বেশি সময় দিতে পারবেন। তা ছাড়া এতে মাঠপর্যায়ে অপরাধও কমে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগীরা যাতে দ্রুত ন্যায়বিচার পান, সে জন্য তদন্তাধীন মামলার জট কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসতে দেরি হওয়ায় অধিকাংশ মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। কম সময়ের মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা তদন্তে গাফিলতি থাকলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..