×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৬-০৬
  • ৫৪ বার পঠিত
নানা সংকটের মধ্যেও আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। মূলত বাজেট ঘাটতি মেটাতেই সরকারের ব্যাংকঋণ নির্ভরতা বাড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

বিশাল অঙ্কের এই বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৫.২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে নির্বাহ করার জন্য প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতকে বেছে নিয়েছে সরকার।

ফলে এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এটি বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ঠিক করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বছর ব্যাংকঋণনির্ভর বাজেট প্রস্তাব করা ঠিক হবে না। কারণ এমনিতেই নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। তারল্য সংকট, ডলারের অপর্যাপ্ততা, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও সুশাসনের অভাবে খুঁড়িয়ে হাঁটছে খাতটি। এর ওপর বড় সরকারি ঋণের বোঝা কান্না বাড়াবে ব্যাংক খাতের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ১৯ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। ফলে আলোচ্য সময় পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক ও এফএএস ফাইন্যান্সের বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে যেমন এখন ডলারের সংকট চলছে, ঠিক একইভাবে নগদ টাকারও সংকট রয়েছে। কয়েক বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত হারে আমাদের রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। এবারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হলে ঋণ করে ঘাটতি পূরণ করতে হয় সরকারকে। দেশ থেকে অথবা বিদেশ থেকে যেখান থেকেই হোক। এখন বাজেট ঘাটতি মেটাতে গিয়ে যদি টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া হয় তাহলে সেটা সারাসরি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে। আবার ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট এবং বেসরকারি ঋণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ। কিন্তু অনেক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কিছু করার থাকে না। কারণ যখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়ে, তখন মুদ্রাবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে টান পড়ে বেসরকারি খাতের ঋণে, যেটা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat