লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না। ২৫৯ রানের লক্ষ্য এ যুগে খুব বড় কিছু নয়, আর যেখানে অস্ট্রেলিয়া দলে ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেস ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্সরা আছেন, তাঁদের জন্য তো আরও নয়। কিন্তু আজ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট ঠিক হাত খুলে রান করার মতো যে ছিল না, সেটি শ্রীলঙ্কান দলে চার স্পিনারেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত আগে ব্যাটিং করে চারিত আসালাঙ্কার ১১০ রানের ইনিংসে লঙ্কানদের ২৫৮ রানের সংগ্রহেই বাজিমাত শ্রীলঙ্কার। প্যাট কামিন্সের পর ম্যাথু কুনেমানের অবিশ্বাস্য লড়াইয়ে ম্যাচটা শেষ বল পর্যন্ত গেলেও শেষ পর্যন্ত ৪ রানের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৩০ বছর পর সিরিজ জয়ের উৎসবে মেতেছে লঙ্কানরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে শ্রীলঙ্কার সাফল্যের মূলে ছিলেন দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। প্রতি ম্যাচেই রান পেয়েছেন টপ অর্ডারের কেউ না কেউ। আগের ম্যাচে পাতুম নিশাঙ্কা দারুণ এক ইনিংসে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। আজ ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন আসালাঙ্কা। তাঁর সঙ্গে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ৬০; পাশাপাশি দুনিত ভেল্লালাগের ১৯ আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ২০ বলে ২১ রানে শ্রীলঙ্কা স্কোর বোর্ডে ২৫৮ রান তোলে। এ সংগ্রহটা আরও বেশি হতে পারত। কিন্তু তিন ব্যাটসম্যানের (দাসুন শানাকা, জেফরি ভ্যান্ডারসে আর মহীশ তিকশানা) রান আউটে সেটি হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাথু কুনেমান, প্যাট কামিন্স ও মিচেল মার্শ। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল পেয়েছেন এক উইকেট।
২৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে অ্যারন ফিঞ্চকে শুরুতেই হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ৬৬ রানে ফেরেন মিচেল মার্শ। ১০১ রানের মাথায় মারনাস লাবুশেনকে হারালে অস্ট্রেলিয়া কিছুটা বিপদেই পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এক প্রান্ত আঁকড়ে ধরে ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু তিনি অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। বড় অসময়ে ফেরেন। ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো ৯৯ রানে আউট হলেন ওয়ার্নার। তাঁকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের জয়ের পথে নিয়ে আসেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। উইকেটের পেছনে ওয়ার্নারের ক্যাচ নেন উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলা। ওয়ার্নার ১১২ বলে ৯৯ করেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ১২টি চারের মার। ওয়ার্নারের জন্য আজকের ইনিংসটি নতুন অভিজ্ঞতাই। এর আগে ২০১৬ সালে ভারত (ক্যানবেরা) আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (ওয়েলিংটনে) ‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’ ফিরলেও শতকের এত কাছে থেকে ফেরাটা তাঁর জন্য নতুন অভিজ্ঞতাই।
অস্ট্রেলিয়াকে আজ দাঁড়াতেই দেননি শ্রীলঙ্কান স্পিনাররা। উপযোগী পরিবেশে অস্ট্রেলীয় দলের লাগামটা টেনে ধরে রেখেছিলেন তাঁরাই। তাঁদের চার স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুনিত ভেল্লালেগে, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও জেফরি ভ্যান্ডারসে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৬ উইকেট। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মিচেল মার্শ (২৬), মারনাস লাবুশেন (১৪), অ্যালেক্স ক্যারি (১৯), ট্রাভিস হেড (২৭) রান পেলেও সেগুলো দলের জন্য যথেষ্ট হয়নি। শেষের দিকে ক্যামেরুন গ্রিন ১৩ রান করেছিলেন।
তবে ওয়ার্নার ফেরার পর নিশ্চিতভাবেই ম্যাচের ভাগ্য যখন শ্রীলঙ্কার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল, সেটি পুরোপুরি নিজেদের দিকে নিয়ে এসেছিলেন প্যাট কামিন্স ও ম্যাথু কুনেমান। নবম উইকেট জুটিতে ২০ বলে ১৭ করে আবার আশা জাগিয়েছিলেন। তবে শেষ উইকেটে কামিন্স ও জশ হ্যাজলউড ৭ বলে ১৪ রান করলে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ওভারে ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১৯ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। শানাকার করা ওভারে দশে নামা কুনেমান প্রথম পাঁচ বলে তুলে ফেলেন ১৪ রান। শেষ বলে জিততে হলে ছক্কা দরকার। কুুনেমান (১২ বলে ১৫) তুলেও মেরেছিলেন, তবে সেটি শুধু ক্যাচই হয়েছে আসালঙ্কার হাতে।
এ জাতীয় আরো খবর..