দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)’র এজাহারভুক্ত আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমির সামনে ফাউণ্ডেশন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বক্তারা বলেছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও জঙ্গি তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়াসহ নানা অভিযোগে বিপর্যস্ত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে অবিলম্ব এজাহারভূক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস, বাংলাদেশ সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মতিউর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম পাটোয়ারি, সাংবাদিক নেতা কালিমুল্লা ইকবালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।
সমাবেশে ড. সুফী সাগর সামস বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীর বিরুদ্ধে ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই বিশ্বদ্যিালয়টি দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু অভিযুক্তদের ঠিক কী কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী। তারা যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তারা বাংলাদেশকে শ্রীলংকা বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ড. সুফী সাগর সামস বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ট্রাস্টি আজিজ আল কায়সার টিটোও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার পিতা এমএ হাসেম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালেই এই সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। টিটোও সিন্ডিকেটের বাইরে নন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজিজ আল কায়সার টিটোকে মামলা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। টিটোর মতো আরো যারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আজিজ আল কায়সার টিটোর সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থের হিসাব নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন জানান তিনি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট ও জঙ্গিবাদে পর্যুদস্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। এতো বেশি অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও ক্রমেই নিম্নমুখী। নর্থ সাউথের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার পুরনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষ বারবারই অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু আদতে নর্থ সাউথ এখনো জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার খোলস থেকে বের হতেই পারেনি।
বক্তারা আরো বলেন, ব্লগার ও লেখক রাজীব হায়দারকে ২০১৩ সালে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে। সেই মামলার সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি নাফিস ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মদদে ১০ বছর পর আবারো ভর্তির সুযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও মিডিয়া সরব হওয়ায় আবার তা বাতিল করা হয়। এমন হীন কাজের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করছে। এদেরকে (অভিযুক্ত ট্রাস্টিদের) এখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করলে ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকাণ্ড বেড়েই চলবে।
বক্তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির শীর্ষ ব্যক্তিদের কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভলাপার্স কোম্পানি থেকে কমিশন, ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, এক লাখ টাকা করে সিটিং এলাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ এলাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও জঙ্গি মদদ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এম এ কাসেম সিন্ডিকেটের হাতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই যেন জিম্মি হয়ে আছে। ওই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষার দাবি জানান তারা।
এ জাতীয় আরো খবর..