এবারের ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ঈদে মোট ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১১০ জন। এই হিসাব মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ এবং দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ ও আহতের প্রায় ১৩.০৩ শতাংশ।
ঈদ যাত্রার ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত হয়েছে। আর আহত হয়েছে আরো ৮৪৪ জন। যদিও সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত এবং ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়কে ১৪.৫১ শতাংশ দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে। নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ২২.৩৫ শতাংশ এবং আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১২৫ জন চালক, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬০ জন পথচারী, ৩৫ জন নারী, ২৫ শিশু এবং ২৫ জন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২২’ প্রকাশ করা হয়। ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১০ মে পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত দুর্ঘটনার খবরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা
হয়েছে। এদিকে গতকাল আরেকটি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি প্রতীকী চিত্র বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজি বাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ার কারণে পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী ভর্তি হলেও ঈদের এই সময় ২০০ থেকে ২৫০ জন ভর্তি হয়েছে, যার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল আর ২৫ শতাংশ ইজি বাইক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতিবছর পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল বিপণন করে সরকার। এতে সরকারের পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই বাহনটি কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না।
ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে (২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে) দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৩৮ এবং শিশু ৫১ জন। ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৫৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৪.৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন অর্থাৎ ১৩ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন
সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সারা দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৫.২২ শতাংশ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ১৬.১৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১.৯৫ শতাংশ। অন্য যানবাহনের মোটরসাইকেলে ধাক্কা/চাপায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯.০৪ শতাংশ। অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২.৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫১.৪২ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ বলেছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪৬.৬৪ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৩০.৭৪ শতাংশ ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৪.৪৮ শতাংশ ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ৮.১২ শতাংশ শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
২০১৯ সালে ঈদের আগে ও পরের ১৪ দিনে ১৪৬টি দুর্ঘটনায় ১৯৪ জন নিহত এবং ৪০২ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালে ঈদ যাত্রায় ১২৮টি দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত এবং ৩১৮ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালে ঈদ যাত্রায় ২৩৯টি দুর্ঘটনায় ৩১৪ জন নিহত এবং ২৯১ জন আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
এ জাতীয় আরো খবর..