কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ- দেশে আট কারণে নারী ভোটার কম। এই কারণগুলো উল্লেখ করে এবারের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে নারী-পুরুষ ব্যবধান কমিয়ে আনতে নারী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়ে পরিপত্র জারি করেছে কমিশন।
গত ১০ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জারি করা এ পরিপত্র পরদিন দেশের সব জেলা ও উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি ও পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আগামী ২০ মে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।
প্রথম পর্যায়ে ১৪০টি উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু হবে। অন্য উপজেলাগুলোয় তিন ধাপে পরবর্তী সময়ে হালনাগাদ শেষ করা হবে।
এবারের ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কর্তন এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠু, নির্ভুল ও সুচারুরূপে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিশন সচিবালয়ের পরিপত্রে উল্লিখিত নারী ভোটার কম হওয়ার আটটি কারণ হচ্ছে, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা, হিন্দু অবিবাহিত মেয়েদের পিত্রালয়ে নিবন্ধন করতে অনীহা; অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম; মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়া, রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরে হওয়া, আবহাওয়া অনুকূল না থাকা, সামাজিক সংস্কার ও ধর্মীয় অজুহাতে ছবি তুলতে অনীহা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের অসচেতনতা।
পরিপত্রে এবার নারীদের অন্তর্ভুক্তির হার যেন উল্লেখযোগ্যভাবে কম না হয়, সে লক্ষ্যে নারী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি ছিল ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথমবারের মতো তৈরি করা ছবিসহ ভোটার তালিকায়। ওই তালিকা অনুসারে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল মোট আট কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ জন। এর মধ্যে নারী চার কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮২০ এবং পুরুষ তিন কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৬ জন। এ হিসাবে নারী ভোটার বেশি ছিল ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৪ জন। ওই সময়ের আগে ও পরে দেশে আর কখনোই পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি ছিল না।
২০১৩ সালের ভোটার হালনাগাদে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার দুই লাখ ৭৯ হাজার ৭৭১ জন কম নিবন্ধিত হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের সময় পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার দুই লাখ ৭৯ হাজার ৭৭১ জন কম ছিল। ২০১৮ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত নারী ভোটার ৯ লাখ চার হাজার ৭৮ জন কম ছিল। সর্বশেষ গত ২ মার্চ ভোটার দিবসে নির্বাচন কমিশন জানায়, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ, ৯৭ হাজার ২৭ জন, পুরুষ ভোটার পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪৫৪ জন। এ হিসাবে বর্তমানে দেশের নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় ২০ লাখ ৯২ হাজার ৫০২ জন কম।
কিন্তু গত বছরের জুনে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে পুরুষ জনসংখ্যা আট লাখ ৪২ হাজার আর নারী জনসংখ্যা আট লাখ ৪০ হাজার।
২০০৮ সালে নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আগের কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের বক্তব্য ছিল, ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থা জারি এবং যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান বহাল থাকার সময় পুরুষদের অনেকে হয়তো ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হননি। এ কারণে ওই সময় পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি হয়।
তবে কাজী রকিব কমিশনেরও পর্যবেক্ষণ ছিল, বয়স কমিয়ে বলার প্রবণতা, জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনাগ্রহ এবং নিবন্ধন কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহের কারণে নারীদের অনেকে ভোটার তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..