নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের বর্তমান সংক্রমণ ঠেকাতে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিধিনিষেধগুলো সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (১২ জানুয়ারি) সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত-ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহিদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস; সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুমধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগসড়ক; রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। সবাইকে অনুরোধ করছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, মাস্ক পরে থাকবেন। যাতে দ্রুত এই করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে, সে জন্য কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ মেনে চলবেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৯ জুলাই, ২০১৯ এ এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিমের প্রাণ। আমি রাজিব ও মিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এই দুর্ঘটনার পরপরই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ওই স্থানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের। যার আজ উদ্বোধন হলো। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও পথচারী এই ব্যস্ততম সড়কটি ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। তাদের জন্য নান্দনিক একটি নিরাপদ ও আধুনিক পথচারী আন্ডারপাস স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও বয়স্ক মানুষের বিবেচনায় লিফট, র্যাম্প ও চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আন্ডারপাস নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থী ও পথচারীর সড়ক পারাপার নিরাপদ হবে, অন্যদিকে এয়ারপোর্ট মহাসড়কের এই অংশে যানজটমুক্ত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট গ্যারিসন লিংক রোড প্রকল্পটি নির্মাণের ফলে সিলেট বাইপাস থেকে কানাইঘাট এবং শাহপরাণ সেতুঘাট থেকে সিলেট শহর বাইপাস পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দ্রুত আর সহজতর হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনে একটি ‘এডুকেশন ভিলেজ’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্টেশন, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সমাজের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘ঢাকা প্রয়াস’ স্কুলের আদলে ‘সিলেট প্রয়াস’ স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, নবনির্মিত এই সড়কটি স্থানীয় স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজতর ও নিরাপদ করবে।’
বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুমধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা কক্সবাজারের বালুখালী হতে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বিধায় আন্তর্জাতিক এ সড়কটি অন্যান্য সড়ক ও মহাসড়ক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সড়কটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ৫০০ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। যা ভবিষ্যতে লংগদু উপজেলা হয়ে মারিষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। এর ফলে পার্বত্য জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথেও একধাপ এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সাল হবে আমাদের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পর জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। অনেক ষড়যন্ত্রের জাল আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে যাচ্ছি। এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’
এ জাতীয় আরো খবর..