×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১১-২৩
  • ১৪ বার পঠিত

বাংলাদেশ রেলওয়ের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন অন্যতম আলোচিত মেগা প্রকল্প হলো দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্প। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেওয়া এ প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এরই মধ্যে প্রকল্প ঘিরে শুরু হয়েছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। অভিযোগের তীর যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিকে।

ট্রেন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ সংকেত ও টেলিকম শাখায় ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ অনুসন্ধান টিম তদন্ত শুরু করেছে। এর আগেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেল প্রকল্পে ঠিকাদারদের যোগসাজশে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও মালপত্র সরবরাহের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, যার অনুসন্ধান ছিল দুদকের নথিতে।

সবশেষ ২৬ অক্টোবর দুদকের অনুসন্ধান টিমের পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেল প্রশাসন আংশিক তথ্য প্রদান করেছে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান টিম যে কোনো সময় মাঠপর্যায়ে তদন্তে নামবে বলেও নিশ্চিত করেছেন টিম লিডার ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংকেত ও টেলিকম বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিমকে ৩ সেপ্টেম্বর এক আদেশে বদলি করা হলেও, মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে ১৬ সেপ্টেম্বর সে আদেশ বাতিল করা হয়। বিতর্কিত কর্মকর্তার বদলি এবং তা বাতিলের ঘটনা ঘিরে রেলওয়ে মহলে গুঞ্জন চলছে। প্রকল্পের বিভিন্ন নথির পাশাপাশি দুদকের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার ব্যক্তিগত যাবতীয় ডকুমেন্টও চাওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের অনিয়ম-লুটপাটের পেছনে রেলের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন বলে রেল অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম রেলের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সচিবের কথামতো মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনকে কল ও মেসেজ করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতীতে দুদক ও রেলওয়ের নিজস্ব অনুসন্ধানে একাধিকবার প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা মিললেও রেলপথ মন্ত্রণালয় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং নিয়ম ভঙ্গ করে প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রমে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে। অনুসন্ধান শুরুর পরও মোহাম্মদ সেলিম প্রভাব খাটিয়ে বদলি ঠেকিয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিয়মিত পদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম রেলওয়ের দুটি মেগা প্রকল্পের আরও তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে একই সঙ্গে বিভাগীয় দায়িত্ব ও প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-গুনদুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে পরিচালক ও পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ সুবক্তগীনের সখ্যর কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপপরিচালক (সিগন্যাল ও টেলিকম) এবং উপপরিচালক (পুনর্বাসন) হিসেবে বহাল রয়েছেন।

মোহাম্মদ সেলিম ২০১৭ সাল থেকে পুনর্বাসন পদের উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চট্টগ্রামে বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পালনের সময় তাকে একাধিক প্রকল্প দায়িত্বে রাখা হয়। কিন্তু ওই সময় অন্য কাউকে পদায়ন করা হলে তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাদের সেখানে দায়িত্ব পালন করতে দেননি। জন্মস্থান চট্টগ্রামের পাহাড়তলী হওয়ায় তিনি স্থানীয় প্রভাবও ব্যবহার করেন। অভিযোগ রয়েছে, অন্য বিভাগ থেকে কেউ দায়িত্বে এলেও তাদের স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে বাধা দিতেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat