ভারতকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। দেশটির ফুটবলে হইচই পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন ভারতের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার বাইচুং ভুটিয়া। ফিফার সিদ্ধান্তকে ‘কঠোর’ বলেই মনে করেন তিনি। তবে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই শাস্তিটা ফুটবলে নিজেদের সঠিক পথে ফেরানোর সুযোগও।
ফুটবল ফেডারেশনে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে ভারতকে নিষিদ্ধ করতে পারে ফিফা—এমন সতর্কবার্তা গত জুনেই পেয়েছিল অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। কাল সেটাই সত্যি হলো।
‘তৃতীয় পক্ষের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের কারণে’ ভারতের ফুটবল ফেডারেশনকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। বিবৃতিতে বলা হয়, এআইএফএফ নিজেদের প্রাত্যাহিক কাজে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি প্রফুল প্যাটেলের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়া এবং এর পরের নির্বাচন নিয়েই যত ঝামেলা। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও নতুন নির্বাচন না দিয়ে তিনি অফিস চালিয়ে যাচ্ছেন, যা আইনের পরিপন্থী হিসেবে রায় দিয়েছেন আদালত।
ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তৃতীয় সর্বোচ্চ (৮৬ ম্যাচে ২৯ গোল) এই গোলদাতার উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’। ৪৫ বছর বয়সী সাবেক এই স্ট্রাইকার বলেছেন, ‘ফিফা কর্তৃক ভারত ফুটবলকে নিষিদ্ধ করাটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। একই সঙ্গে আমি মনে করি ভারত ফুটবলকে নিষিদ্ধ করে কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়েছে ফিফা।’
ফুটবল ক্যারিয়ারে ‘সিকিম স্নাইপার’ নামে খ্যাতি কুড়োনো বাইচুং একইসঙ্গে নিজেদের করণীয়ও মনে করিয়ে দিলেন, ‘নিজেদের সবকিছু ঠিক করে ফেলার এটা দারুণ সুযোগ। এ জন্য ফেডারেশন, রাজ্য সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং সবই করতে হবে ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য।’ এআএফএফ নিজেদের ৮৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ফিফার নিষেধাজ্ঞা পেল। ১৯৩৭ সালের ২৩ জুন অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলসংখ্যায় হাঙ্গেরির কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাসকে ধরে ফেলেছেন। ১২৯ ম্যাচে ৮৪ গোল ৩৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের। তাঁর সামনে এখন ১৬২ ম্যাচে ৮৬ গোল করা আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। স্বাভাবিকভাবেই, ভারতের সমর্থকেরা স্বপ্ন দেখেছেন গোলে দ্রুতই মেসিকেও হয়তো ছাড়িয়ে যাবেন ছেত্রী। কিন্তু ভারত নিষিদ্ধ হওয়ায় ছেত্রীর এই স্বপ্ন এখন হুমকির মুখে পড়ে গেল। নিষেধাজ্ঞা ওঠার আগ পর্যন্ত ভারত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারবে না।
তবে ছেত্রী মনে করেন, এসব বিষয়ে খেলোয়াড়দের কিছুই করার নেই, ‘অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। আমার পরামর্শ হলো, এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবার দরকার নেই কারণ আমাদের (খেলোয়াড়) হাতে কিছু নেই। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারাই সেরা ফলটা বের করে আনার চেস্টা করছেন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কঠোর পরিশ্রম করছে। খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো নিজেদের কাজটা যেন ঠিকমতো করতে পারি। এআইএফএফের সবাই এটা সমাধানের চেস্টা করছেন।’
ভারতের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ‘ধ্যানচাঁদ পুরস্কার’জয়ী সাবেক স্ট্রাইকার ও কোচ শাব্বির আলী এই নিষেধাজ্ঞাকে খুবই দূর্ভাগ্যজনক বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফুটবল পিছিয়ে পড়ল বলেও মনে করেন দেশের হয়ে ৬৬ ম্যাচে ২৩ গোল করা শাব্বির, ‘যা কিছুই ঘটেছে খুবই দূর্ভাগ্যজনক এবং এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফুটবল পিছিয়ে পড়ল। (ফেডারেশনের) নির্বাচন হতে যত দেরি, নিষেধাজ্ঞা তার চেয়েও দ্রুততম সময়ে উঠে যাবে বলে বিশ্বাস করি।’
এ জাতীয় আরো খবর..