×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০৮
  • ৮৪ বার পঠিত
সরকার পতনে সাত দলের সমন্বয়ে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। আজ সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব নতুন এই জোটের আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

আসম আবদুর রব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতিহাসের অনিবার্য প্রয়োজনে আজকে গণতন্ত্র মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করছে।

স্বৈরাচারি সরকারের পতন, রাষ্ট্রব্যবস্থার বদল, শাসনব্যবস্থা ও সাংবিধানিক সংস্কার, রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই জোট করা হয়েছে। ’ 
তিনি বলেন, ‘মহান জনগনের মুক্তিসংগ্রামের এই কাফেলা, এই আন্দোলন-সংগ্রামের সাংবাদিক, আইনজীবী, পেশাজীবী, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, শ্রমজীবীসহ সব শ্রেণী-পেশার জনগণ এবং দেশবাসীকে আমি আহবান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা, সব শিল্প-কারখানা, সব সংগঠনে গণতন্ত্র মঞ্চের সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। ’

রব বলেন, ‘অবৈধ সরকার রাষ্ট্রকে আইনগত ও নৈতিকভাবে ধবংস করে ফেলেছে। অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজের ভিত্তি উচ্ছেদ করে দিয়েছে। তারা জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন। জনগন এতো ‍উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে আছে তখন ওরা পালাবার রাস্তা পাবে না। তোমরা (সরকার) ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আমরা ওপেন ঘোষণা দিচ্ছি তোমাদেরকে চলে যেতে হবে, তোমাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। জনগণের উত্তাল মিছিলে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে ইনশাল্লাহ। ’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িত, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর পেশা ও সংগঠনের ব্যক্তিকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে। এটাই হবে কার্য্করী জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্যে গণজাগরন, গণবিস্ফোরণ, গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত করবে। ’

জেএসডির সভাপতি আরো বলেন, ‘জনগনকে আন্দোলনে শরিক হতে বলছি। রাস্তায় সবাইকে নামতে হবে। এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এই লড়াই বাঁচা-মারার লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, যারা জনগনের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে পালাতে দেয়া যাবে না, তারা যেন পালাতে না পারে। ’

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে অক্টোবরে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জেএনডি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। পরবর্তীতে নির্বাচনের পর ওই ফ্রন্ট ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ার লক্ষ্য নিয়ে গত জুন মাস থেকে বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ইতিধ্যে দলটি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। এই সংলাপের পর ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটল।

সংবাদ সম্মেলনে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ এর রূপরেখা উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ চায় এখন পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দিশা নিয়ে রাজপথে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই কারণে আমরা দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দল, শ্রেণী ও পেশার সংগঠন ও সামাজিক শক্তিগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাকে আমরা জরুরি কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করি। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে বিদায় দিতে না পারলে মানুষের ভোটের অধিকার, অন্তর্বতীকালীন সরকার, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিছুই অর্জন করা যাবে না। ’

মান্না বলেন, ‘আমরা জনগনের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলে দেশে এক নতুন সংগ্রামের সূচনা করতে চাই। আমরা চাই, রাজপথে যুগপত ধারায় জনগণের বৃহত্তর কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে যাতে বর্তমান সরকার ও বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা বদলাতে জনগণের এক ব্যাপক উত্থান ঘটানো সম্ভব হয়। আমরা জনগণকে এই লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। ’ 

গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য : সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই অন্তর্বতীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হবার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

একই সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো ও প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এই গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করতে পারে।

সরকার যাতে কখনো স্বৈরতন্ত্রী না হতে পারে সেজন্য নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র মঞ্চের সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের ৭ দফা এবং জনগণের সার্বিক মঙ্গলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনে ৭ দফা প্রস্তাবনা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মান্না।

কর্মসূচি : বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশি অত্যাচার, নির্যাতন ও হামলা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, জ্বালানি তেলসহ সব জিনিসপত্রে মূল্য বৃদ্ধি, সরকারের উদাসীনতার প্রতিবাদে আগামী ১১ আগস্ট সকাল ১১টায় ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে গণতান্ত্রিক মঞ্চ। তবে স্থান  পরে জানানো হবে বলে জানান আয়োজকরা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, জেএসডির সানোয়ার হোসেন তালুকদার, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র চিন্তা সংস্কারের আসিফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat