জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা উল্লেখ করে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে সমগ্র দেশের অর্থনীতির ওপর। এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তাই আর সময় নেই। আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে, জেগে উঠে এদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন, আমরা সেই লক্ষ্যে আরো দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমি আহ্বান জানাই ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন, আপনারা ঐক্য গড়ে তুলুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাই, আসুন জাতির প্রয়োজনে, আমাদের ভবিষ্যতে প্রজন্মের প্রয়োজনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়, পরিবহনভাড়া। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল-ডাল-আটা-তেলের মূল্য আবার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়ে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সাধারণ মানুষ। এভাবে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে। মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আজকে আমরা অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার, এই সরকার আজকে সবচেয়ে ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। তারা আজকে বাংলাদেশের সব অর্জন কেড়ে নিচ্ছে। সে জন্যই এদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে একমাত্র দেশপ্রেমিকের কাজ।
তিনি বলেন, সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। কারণ, তারা এত মিথ্যাচার করেছে যে রিজার্ভে এত টাকা আছে, এত ডলার জমা আছে, তাদের কোনো চিন্তার কারণ নেই। আজকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ডলার ঋণ চেয়েছে। আইএমএফের ডলার ঋণের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলেছে, কোথাও কোনো অধিক ব্যয় করা যাবে না। তারা বলেছে, যেসব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে সেই ভর্তুকিগুলো প্রত্যাহার করা হোক।
বিএনপি নয়, সরকারই চক্রান্ত করছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার বলে চক্রান্ত। চাক্রান্ত তো করেন আপনারা। বারবার বলেছি কে চক্রান্ত করছে বলেন। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব। আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের সংগঠিত করে, জনগণকে সংগঠিত করে, সব রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হব। তাহলেই ‘নুরে আলম ও আবদুর রহিমের যে রক্ত, সেই রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশে ছাত্রদল মহানগর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে সমবেত হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে।
ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় ছাত্র সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার হোসেন প্রমুখ নেতা বক্তব্য দেন।
এ জাতীয় আরো খবর..