×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-৩০
  • ৭৩ বার পঠিত
রোহিঙ্গা জেনোসাইডের অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে জবাব দিতে হবে মিয়ানমারকে। নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) গত ২২ জুলাই মামলার এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করার পাশাপাশি অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছেন। মামলার আদেশে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছে। এর ফলে এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া আবারও শুরু হলো।

‘জেনোসাইড’-এর বাংলা অনুবাদ হিসেবে অনেক সময় ‘গণহত্যা (মাস কিলিং)’ বলা বা লেখা হলেও আন্তর্জাতিক আইনে এটি ভিন্ন। জেনোসাইডের ক্ষেত্রে শুধু হত্যা নয়, ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয় (ধ্বংসের অভিপ্রায়)’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি জাতিগত নির্মূল (এথনিক ক্লিনজিং) বা অন্য গুরুতর অপরাধ থেকে জেনোসাইডকে আলাদা করেছে। জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে জেনোসাইডসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সম্পর্কিত তার সনদ অনুমোদন করে। সেখানে জেনোসাইডের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, একটি জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক ধ্বংসের লক্ষ্যে একটি জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা, ওই গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা বা মারাত্মক শারীরিক বা মানসিক ক্ষয়ক্ষতি, গোষ্ঠীর মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্যে উদ্ভূত জীবনের পরিস্থিতি, জন্ম প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে চাপ প্রয়োগ করার মতো অপরাধ।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার অভিযোগ, জেনোসাইডের সংজ্ঞায় উল্লেখিত অপরাধ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে। তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সন্তান জন্ম দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ওই গোষ্ঠীকে ধ্বংসের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিজেদের ভূখণ্ড ছাড়তে বাধ্য করতে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিনজিং অপারেশন’ (নির্মূল অভিযান) চালিয়েছে।

জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও সেই সনদ লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গা জেনোসাইড সংঘটনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা জেনোসাইড ঠেকাতে অন্তর্বর্তী আদেশের জন্যও আবেদন করে গাম্বিয়া। ওই বছরই অন্তর্বর্তী আদেশ প্রশ্নে শুনানির পর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি আইসিজে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী আদেশ দেন। সে সময়ই আইসিজে জেনোসাইডসংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ লিখিতভাবে উত্থাপনের জন্য গাম্বিয়াকে ওই বছরের ২৩ জুলাই ও মিয়ানমারের পাল্টা যুক্তি উত্থাপনের জন্য ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি সময় নির্ধারণ করে দেন। এরপর আইসিজে ওই সময় বাড়িয়ে গাম্বিয়ার জন্য ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর ও মিয়ানমারের জন্য ২০২১ সালের ২৩ জুলাই পুনর্নির্ধারণ করেন।

আইসিজের তথ্য অনুযায়ী, গাম্বিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আইসিজেতে উত্থাপন করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সেই অভিযোগের জবাব না দিয়ে গাম্বিয়ার মামলা করার এখতিয়ার নিয়েই আইসিজেতে আপত্তি জানায়। শুনানির পর গত ২২ জুলাই আইসিজে সেই আপত্তি খারিজ করে দেন। আইসিজে একই সঙ্গে আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে অভিযোগের জবাব উপস্থাপনের সময় নির্ধারণ করেন। আইসিজের রায়কে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আইসিজে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারেন। আইসিজের পাশাপাশি রোহিঙ্গা জেনোসাইড ও গুরুতর অপরাধ নিয়ে তদন্তপ্রক্রিয়া চলছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতেও (আইসিসি)। সেখানে ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হতে পারে।

এদিকে আইসিজে, আইসিসির পাশাপাশি ভবিষ্যতে যে কোনো আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক বা দেশীয় আদালতে রোহিঙ্গা জেনোসাইড ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের বিচারের জন্য জাতিসংঘ গঠিত মিয়ানমারবিষয়ক স্বাধীন তদন্ত কাঠামো (আইআইএমএম) অপরাধের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে।

গাম্বিয়ার মামলার এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তি আইসিজে খারিজ করার পর আইআইএমএম প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেছেন, এটি শুধু মিয়ানমারের জনগণের জন্যই নয়, জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ মেনে চলার ব্যাপারে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও অনেক বড় ঘটনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat