নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকানপাট-মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা দলীয় তদন্ত টিমের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, তদন্ত টিম সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়।
যেটা অন্যান্যা জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।
তিনি বলেন, নড়াইল আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ বসু দু-তিন দিন পর সেখানে যান। সেখানের উপজেলা চেয়ারম্যানও সম্ভবত যাননি। প্রশাসন নির্লিপ্ত এবং এটা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমরা সেখানে গিয়ে তা সরেজমিনে দেখে ক্ষতিগ্রস্তসহ সাধারণ মানুষের কথা বলে এটা প্রত্যক্ষ করেছি।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নড়াইলের এই ঘটনায় সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে এটা উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই যারা সংখ্যায় কম সেই সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন-হামলা-লুটপাট-ভাঙচুরের এই ঘটনাগুলো বেড়েছে এবং তাদের সম্পত্তির বেশির ভাগ মালিক কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে গৃহ থেকে, জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ দখল করা হচ্ছে তাদের প্রধান লক্ষ্য।
নড়াইলের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ পর্যন্ত এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দেখতে পাইনি। এটা দুঃখজনক।
তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ১৫ তারিখ হঠাৎ করে মাগরিবের নামাজের পর প্রায় দুই-তিন শ লোক সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সাহাপাড়ায় প্রবেশ করে। সেখানে ১০-১২ বাড়ি-ঘর ভেঙে তছনছ করে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশের নাকের ডগার ওপরে এই ঘটনাটা ঘটল।
বর্তমানে নড়াইলের দিঘলীয়া গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে এই অঞ্চলটাই ছিল যশোর-নড়াইল-বগুড়া মুক্তাঞ্চল। সে সময়ও এখানে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। সেই গ্রামের ওপর এ রকম নির্মমতায় সেখানকার লোকজন মর্মবেদনায় ভুগছেন।
ঠাকুরগাঁও এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার নিজের নির্বাচনী এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রচুর, এক লাখ ৭ হাজার ভোটারই আছেন রাজবংশীর লোকেরা। তাদের মধ্যে একজন আমার ছাত্রই ছিলেন তিনি, নাম ছিল অমর রায়। তিনি খুব চমৎকার একটা কথা বলতেন বক্তৃতা দেওয়ার সময়। আমাদের দেশি ভাষায় হামরা হচ্ছি বিহার দিনের পগরি। মানে দু-এক দিনের পাগড়ি হচ্ছি আমরা। ওই নির্বাচনের দিন পাগড়ি পরা হয় আর কখনো হয় না। ওই পাগড়ি পরে নৌকাকে ভোট দিতে হয়। এখানে আওয়ামী লীগ তাদেরকে মনে করে যে তাদের লোক, তারা তাদের সম্পত্তি, তারাই এদের রক্ষক। তাদের যা ভোট-টোট যা কিছু আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। যা কিছু অত্যাচার-নির্যাতন, তাদের সম্পদ লুট করা- এটা আবার তারাই করবে।
সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ জাতীয় আরো খবর..