প্রশংসায় ভাসছেন শরীফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মিম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে ছবিপ্রেমীরা আলোচনায় মেতেছেন। দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া ইতিবাচক সব মন্তব্যে তাঁরাও বেশ চাঙা। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া পরাণ ছবিটি যাঁরাই দেখেছেন, তাঁরাই এই দুই তারকার প্রশংসা করছেন। সবারই বক্তব্য, এই ছবিতে অন্য এক মিমকে দেখেছেন তাঁরা। কেউ কেউ তো তাঁর অভিনয়কে ‘অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ’ বলেও অভিহিত করেছেন। আর শরীফুল রাজকে নিয়ে মন্তব্য এ রকম—ট্রেলার দেখেই বোঝা গিয়েছিল, তিনি ফাটিয়ে দেবেন। তবে এতটা ফাটাফাটি অভিনয় করবেন, তা ভাবনায় ছিল না। বেশির ভাগ সিনেমাপ্রেমীর মত, শরীফুল রাজ যে ঢালিউডের উজ্জ্বল তারকা হতে যাচ্ছেন, তারই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন এই ছবিতে।
মিম ও রাজ দুজনই এবারই প্রথম কোনো ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করলেন। ‘পরাণ’ তাঁদের জীবনের অন্যতম সুখকর অনুভূতি হয়ে থাকবে বলেও জানালেন এই দুই তারকা। ছবিটি নিয়ে প্রশংসায় ভাসতে থাকা মিমের বিনোদন অঙ্গনের শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ১৫ বছর আগে, ২০০৭ সালে। অন্যদিকে শরীফুল রাজের শুরু ২০১০ সালে, বিজ্ঞাপনচিত্রের ‘সাইড আটির্স্ট’ হিসেবে। এরপর র্যাম্প মডেলিংও করেন। ‘পরাণ’-এর আগে রাজের চারটি ছবি মুক্তি পায়।
২০১৬ সালে শরীফুল রাজ অভিনীত প্রথম ছবি ‘আইসক্রিম’ মুক্তি পায়। এই ছবির কাজ করতে গিয়েই চলচ্চিত্রের প্রেমে পড়েন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, চলচ্চিত্রকে আঁকড়ে ধরেই এগিয়ে যাবেন। রাজের প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। প্রথম ছবি মুক্তির ছয় বছরের মাথায় সবচেয়ে বড় সাফল্য পেলেন ‘পরাণ’ দিয়ে। ঈদে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবি যাঁরা দেখছেন, বেশির ভাগই শরীফুল রাজকে নিয়ে কোনো তুলনায় যেতে চাননি। তাঁদের কথা একটাই—রাজ অসাধারণ। রাজও বলেন, ‘সিনেমাটাই করতে চাই। ‘আইসক্রিম’ ছবিতে কাজ করার পর সিনেমাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে গেছে। একেই আঁকড়ে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
ছোটবেলা থেকেই নাচ করছেন বিদ্যা সিনহা মিম। স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে বিনোদন অঙ্গনে নিজেকে মেলে ধরবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই নাম লেখান লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায়। ২০০৭ সালে সেই আসরে হন চ্যাম্পিয়ন। এরপর বড় পর্দায় অভিষেক হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ দিয়ে। সময়ের হিসাবে পেরিয়েছে দেড় দশক। টেলিভিশন নাটক ও মডেলিং বাদে মিম অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ২০টি। ২০১৪ সালে ‘জোনাকির আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য যুগ্মভাবে পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারও।
এর বাইরে তিনি অভিনয় করেছেন ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘তারকাঁটা’, ‘পদ্মপাতার জল’, ‘ব্ল্যাক’, ‘সুইটহার্ট’, ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘আমি নেতা হব’, ‘সাপলুডু’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে। কোনো সিনেমায় মিমের অভিনয় এতটা আলোচনায় আসেনি, যা এবারকার ঈদের দিন থেকে হচ্ছে। ‘পরাণ’ ছবি তাঁকে এনে দিয়েছে অন্য রকম এক সফলতা, যা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য। মিমও তাঁর এমন সাফল্যে অভিভূত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন পরিচালকের কাছে।
মিম বলেন, ‘ছবিটিতে আমার চরিত্রের নাম অনন্যা। দর্শক ওই অনন্যাকে গালি দিচ্ছেন। আমি মনে করি, এটাই একজন শিল্পীর সার্থকতা। তার মানে আমি অভিনয়ের মাধ্যমে এমনভাবে চরিত্রটাকে উপস্থাপন করেছি যে আমাকে তাঁরা ঘৃণা করতে বাধ্য হচ্ছেন। মানুষজন যদি এ চরিত্রকে ঘৃণা না করতেন, তাহলে বুঝতাম, আমার অভিনয় হয়নি। আমি তথাকথিত নায়িকা থেকে বের হয়ে অভিনেত্রী হতে চাই। আমি সেই চরিত্র করতে চাই, যেটা কঠিন। যেটা কেউ কখনো করেনি।’
‘পরাণ’–এর সাফল্যের পর সময়টা বেশ উপভোগ করছেন শরীফুল রাজ। পা মাটিতে রেখে আগামী দিনের পথটাও পাড়ি দিতে চান ঢালিউডের নতুন এই সম্ভাবনা। যদিও অনেকেই জানেন না, যে রাজকে নিয়ে এখন ঢালিউডে এত আলোচনা, তাঁকে একটা সময় অর্থকষ্টে ঢাকাও ছাড়তে হয়েছিল। বছরখানেক বিরতির পর আবার ফিরে আসেন। ২০০৯ সালে সিলেট থেকে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসা শরীফুল রাজের শহরটা যে ভালো লেগে যায়। বিজ্ঞাপনচিত্র ও র্যাম্প মডেলিংয়ের অলিগলি পার হয়ে একটা সময় কাঙ্ক্ষিত চলচ্চিত্রের পথটা ঠিকই খুঁজে পান। আইসক্রিম দিয়ে শুরু করা রাজ এরই মধ্যে অভিনয় করেছেন ‘ন ডরাই’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘গুণিন’–এর মতো চলচ্চিত্রে। সামনে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘হাওয়া’, ‘কাজলরেখা’, ‘রক্তজবা’, ‘দেয়ালের দেশ’ ও ‘দামাল’-এর মতো চলচ্চিত্র।
রাজ বললেন, ‘দর্শকদের এমন ভালোবাসায় আমি বিস্মিত, এখনো সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এই ভালোবাসা সঙ্গী করে আরও ভালো ভালো কাজের সঙ্গী হতে চাই। সেই সঙ্গে দোয়া চাই সবার কাছে, যেন এমন ভালোবাসায় আজীবন জড়িয়ে রাখেন।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শরীফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মিম—দুজনই হতে পারেন ঢালিউডের নতুন জুটিও। ভালো পরিচালক আর গল্পে কাজ করার সুযোগ পেলে নিজেদের ভালোভাবে মেলে ধরতে পারবেন বড় পর্দায়। কেউ আবার বলছেন, দুজনের মুক্তি প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্রগুলো বলে দেবে, তাঁদের যাত্রাপথ কতটা দীর্ঘ হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..