নিজের কাঁধে পুরো ছবি তুলে নিতে ভয় পান না তাপসী পান্নু। যেকোনো কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে সব সময় প্রস্তুত এই বলিউড অভিনেত্রী। এবার ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিতালি রাজের আত্মজীবনীমূলক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পর্দায় মিতালি হয়ে উঠতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাপসী। গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে সেই ছবি ‘শাবাশ মিঠু’। মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে তাপসী পান্নুর সঙ্গে সাক্ষাতের শুরুতে উঠে আসে এই ছবির প্রসঙ্গ। তাপসী বলেন, ‘আমি সত্যি লজ্জিত যে আগে মিতালি রাজ সম্পর্কে জানতাম না। কিন্তু তাঁর এক সাক্ষাৎকারের কথা কানে এসেছিল। এক সাংবাদিক মিতালির কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর প্রিয় পুরুষ ক্রিকেটারের নাম। জবাবে মিতালি বলেছিলেন, “যেকোনো পুরুষ ক্রিকেটারকে কেন জিজ্ঞেস করা হয় না যে তাঁর প্রিয় নারী ক্রিকেটার কে?” মিতালির এই জবাব আমাকে ছবিটি করতে আরও আগ্রহী করে তুলেছিল।’
শুধু মাঠে-ময়দানে নয়, সিনেমাজগতেও লিঙ্গবৈষম্য দেখা যায়। যা নিয়ে আগে তাপসী, বিদ্যা বালান, সোনম কাপুর, কঙ্গনা রনৌতসহ অনেকেই আওয়াজ তুলেছেন। তবে অবস্থার কিছু বদল হয়েছে। তাপসীকে প্রধান চরিত্রে নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী নির্মাতারা। তবে তাপসী মনে করেন, এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি। অভিনেত্রী বলেন, ‘এখনো লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নারীকেন্দ্রিক ছবির জন্য নির্মাতাদের বাজেট কম। নারীকেন্দ্রিক ছবির জন্য স্ক্রিন পাওয়া যায় না। কিন্তু অন্য ছবির স্ক্রিন পাওয়ার সমস্যা হয় না।’ তাপসী নিজের এই সংগ্রামের সঙ্গে মিতালি রাজের সংগ্রামের কিছুটা মিল খুঁজে পান। তিনি বলেন, ‘মিতালি ও আমাকে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি উন্মাদনা ক্রিকেট ও সিনেমা ঘিরে। অথচ ছেলেদের ক্রিকেট দেখতে মানুষ ভিড় করে। ছবির মূল চরিত্রে পুরুষ হলে হু হু করে টিকিট বিক্রি হয়। সব ক্ষেত্রেই এই বৈষম্য দূর করতে হবে।’
তাপসীর ঝুলিতে ‘পিঙ্ক’, ‘থাপ্পড়’, ‘বদলা’র মতো একাধিক সফল ছবি আছে। তবে রাতারাতি সফলতা পাননি এই বলিউড নায়িকা। গুটি গুটি পায়ে সফলতার শিখরের দিকে এগিয়ে গেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাপসী বলেছেন, ‘সব সময় ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাস রেখেছি। রাতারাতি সাফল্য চাইনি। এই পথ যদিও দীর্ঘ ও কষ্টকর। শুরুর দিকে আমাকে নিয়ে কারও তেমন প্রত্যাশা ছিল না। প্রথম সারির কোনো নায়কের নায়িকা হিসেবে ভাবা হতো না। এখন নির্মাতাদের আস্থা জন্মেছে।’
শুরুতে ‘শাবাশ মিঠু’ পরিচালনার কথা ছিল রাহুল ঢোলাকিয়ার। কিছুদিন পর বাঙালি পরিচালক সৃজিত মুখার্জির কাঁধে এই ছবির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। পরিচালক বদল প্রসঙ্গে তাপসী বলেছেন, ‘কোভিডের কারণে দুই বছর নষ্ট হয়ে যায়। রাহুলের অন্য কমিটমেন্ট ছিল। তাই তিনি ছবিটি ছাড়তে বাধ্য হন। শুরুতে ভয় ছিল যে আমি চরিত্রের প্রতি সুবিচার করতে পারব কি না। আমাকে দর্শক একজন ক্রিকেটার হিসেবে গ্রহণ করবেন কি না। তবে সৃজিতের কারণে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম। তাঁর পরিচালনায় স্বচ্ছন্দের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। কারণ, সৃজিত নিজে অনেক বড় ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রিকেট তাঁর প্রথম প্রেম। এমনকি সিনেমারও আগে। তাই সঠিক মানুষের হাতে এই ছবির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল।’
কথায় কথায় তাপসী জানান যে সৃজিত পরিচালিত কোনো ছবি এখনো দেখেননি তিনি। তবে তাঁর দেখার ইচ্ছে আছে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ম্যাথিয়াস বোর সঙ্গে সম্পর্কে আছেন তাপসী। বিয়ে করবেন কবে জিজ্ঞেস করতে লাজুক হাসি হেসে তাপসী বলেন, ‘অনেক কঠিন প্রশ্ন। ১০ বছর ধরে সম্পর্কে থাকলেও এত দিন কেউ জানত না। এখন দেখছি আমার সম্পর্ক নিয়ে সবার আগ্রহ। সত্যি বলতে, বিয়ের ফুরসত নেই। হাতে প্রচুর ছবি। তার ওপর আছে নিজের প্রযোজনা সংস্থার কাজ।’
এ জাতীয় আরো খবর..