নতুন অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বাজেট কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, এর চ্যালেঞ্জগুলো এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সজীব হোম রায়
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া এবারের বাজেট কতটা বাস্তবায়নযোগ্য? বাজেটে যেসব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কতটা বাস্তবসম্মত?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : নতুন বাজেটে যেসব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমি সমর্থন করি। এগুলো বাস্তবসম্মত।
কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করি না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
এটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব বেশি না। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের কর জিডিপি রেশিও সবচেয়ে কম। বিদায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরেও এর পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।
আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হতাশাজনক। সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট করা হয়। এসব অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
চলতি বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের টার্গেট কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু অর্জন হবে না। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪.১ শতাংশ। এটি আগে ছিল ১৪.৮ শতাংশ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি ঠিকই আছে। এটি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি বাড়লেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সার্বিক বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে।
এসব সমস্যা সমাধানে কী কী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতে হলে আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। এখানে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব রয়েছে। জবাবদিহি বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার দরকার রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এর অভাব দেখা যায়। এ ছাড়া যাঁরা ভালো কাজ করেন তাঁদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজ করাদের তিরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
নতুন বাজেটে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো সরকারি সংস্থা প্রশ্ন করবে না। সরকারের এই উদ্যোগকে কিভাবে দেখছেন?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : কালো টাকার মতো এটিও অনৈতিক। কোনোভাবেই সমর্থন করি না। অসাধুরা মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা টাকা বৈধ করতে পারবে। আর সাধারণ ভালো করদাতাদের ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এটি বৈষম্যমূলক। এতে মানুষ অনৈতিক কাজে উৎসাহিত হবে। পাচার করা টাকার পরিমাণ বাড়বে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : নতুন অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ৭.৪২ শতাংশে উঠেছে। এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রেমিট্যান্স পতন ঠেকানো, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়তি ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান করা, উচ্চ-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।
এ জাতীয় আরো খবর..