কোক স্টুডিও বাংলায় লোকগান সব লোকে কয় গেয়ে আলোচনায় এসেছেন কানিজ খন্দকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এই কণ্ঠশিল্পী নতুন গানের কাজ করছেন। শনিবার সন্ধ্যায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
কোক স্টুডিও বাংলায় গান গাওয়ার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
খুবই ভালো। কয়েক দিন আগে তো গানটি প্রকাশিত হয়েছে। এখনো সাড়া পাচ্ছি। সবাই ভালো বলছে।
আপনার সংগীতজীবনের পথচলায় এই গানের জন্যই কি বেশি সাড়া পাচ্ছেন?
একদমই তাই। আমি একটা রিয়ালিটি শোতে ছিলাম। এটিএন বাংলায় মেঘে ঢাকা তারা, ২০১১ সালের ওই অনুষ্ঠানে আমি প্রথম হয়েছিলাম। গান প্রকাশ করছি তারও আগে থেকে। তবে সিরিয়াস হয়েছি তখন থেকে। সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করছি, মাস্টার্স করছি লোকসংগীতে।
কোক স্টুডিও বাংলায় সুযোগ পাওয়াকে কীভাবে দেখছেন?
আমি একদম লাকিলি সুযোগ পেয়ে গেছি। আমি যে আবেদন করছি, এটাও আমি জানতাম না। আমাদের ইউনিভার্সিটির বড় ভাই, অনিমেষদা (নাসেক নাসেক গানের গায়ক) একদিন বলল, তোর সব লোকে কয় গানটা আমাকে পাঠা। শুনেছি এই গানের জন্য আরও অনেকের ভোকাল নিয়েছে। তারপর আমারটা শুনে মিটিং করে ডিসিশন নিয়েছে। আমি জানতামও না কোক স্টুডিওর জন্য গানটা নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যখন সিলেক্ট হই, আমাকে ডাকে। অনুভূতিটাই ছিল অন্য রকম। তবে আমি ফাইনালি সিলেক্ট হব, একদমই ভাবিনি। রেকর্ডিংয়ের দুই দিন আগে যখন জানাল আমি সিলেক্ট, তখন আমার গলাটা বসা ছিল। এরপর তিন দিন সবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিই। কারণ, আমার গলার বিশ্রাম লাগবে। তারপর গাইলাম আরকি।
রিয়ালিটি শো ‘মেঘে ঢাকা তারা’ অনুষ্ঠান আপনার সংগীতজীবনের পথচলায় কতটা ভূমিকা রেখেছিল?
তখন তো শিখছিলাম। সেই সময় একটা পজিশন পেলে তো স্পিরিটটা আরও বেড়ে যায়। পরিবারের গ্রহণযোগ্যতাও বেড়ে যায়; কারণ তারা আমার গান গাওয়া পছন্দ করছিল না। কিন্তু আমি ভালো করছি দেখে সাপোর্ট দেওয়া শুরু করছিল। এটা একটা স্ট্রং ভূমিকা রেখেছে।
আপনার পরিবারের কেউ কি গানের সঙ্গে ছিল না?
একদমই না। পরিবারের কেউ গান পছন্দ করত না। আমার আগ্রহেই গান শিখতে যাই। ওস্তাদ গোলাম রাব্বানী রতন আমার শেখার আগ্রহ দেখে, আমাকে মেয়ে হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি আমার তত্ত্বাবধান করছেন। পরে অবশ্য পরিবারও সাপোর্ট দেওয়া শুরু করে।
পরিবার কখন বুঝল, তাদের মেয়ে নাছোড়বান্দা, গান ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চায় না।
ছোটবেলা থেকেই বুঝে গিয়েছিল। কিন্তু তারা মন থেকে গ্রহণ করেছে তখন, যখন আমার অর্জন হতে থাকল। অনিশ্চয়তা কেউই তো চায় না। তারাও চাচ্ছিল, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হই। কোক স্টুডিওতে গাইবার পর বেশি পজিটিভলি নিতে শুরু করে।
লোকগান নিয়েই কি এগিয়ে যেতে চান?
হ্যাঁ, আমি তো মাস্টার্স করছি লোকগানের ওপর। অনার্স করেছি ভোকাল মিউজিকে।
সংগীতে অনেকের অনুপ্রেরণা থাকে। পরিবারে যেহেতু কেউ ছিল না, আগ্রহটা তৈরি হয়েছিল কীভাবে?
এটা একদম নিজে থেকে। কাউকে দেখে বললে ভুল হবে। তারপরও কাউকে যদি আইডল মানি, যাকে আমি বাবা বলে ডাকি, তিনি আমার ওস্তাদ গোলাম রাব্বানী। তাঁকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করি।
কানিজ খন্দকার
আমার খুব ভালো লাগে বারী সিদ্দিকী স্যারের গান। তাঁর গায়কির ঢংটা অন্য রকম তো।
পড়াশোনা যেহেতু সংগীতে, রেয়াজের অন্য আলাদা সময় কি রাখেন?
ছোটবেলা থেকেই সময় ঠিক করা। যেমন সকালে উঠব, নামাজ পড়ব, এরপর এক ঘণ্টা রেয়াজ করব। আর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পরও এক ঘণ্টা রেয়াজ করতাম। এটা ক্লাস ফাইভ থেকে চলছে। এখন তো আরও বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাকটিস হয়; কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় ঘণ্টা ক্লাস করতে হয়। তারপর ওই দুটো সময়েও রেয়াজ করি, যদি অন্য কোনো ব্যস্ততা না থাকে।
সংগীত নিয়ে স্বপ্ন কী?
মৌলিক কিছু লোকগান তৈরি করছি, সামনে রিলিজ পাবে। ইচ্ছা আছে, লোকগানের কোনো ধারা নিয়ে পিএইচডি করার। গবেষণা করার ইচ্ছা আছে। পেশাদার সংগীতের পাশাপাশি সংগীত–সম্পর্কিত একটা চাকরি করার ইচ্ছা।
এ জাতীয় আরো খবর..