দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থান টানা তিন দিন ধরে প্রায় একই রকম। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও ১৫ শতাংশের ওপরে। গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ২৪১ জন।
এ সময় শনাক্তের হার ছিল ১৫.২৩ শতাংশ। তবে ওই ২৪ ঘণ্টায় কেউ মারা যায়নি। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৮৭ জন শনাক্ত হয়। আর তিনজনের মৃত্যু হয়। শনাক্তের হার ছিল ১৫.৪৭ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায়ও এক হাজার ১০১ জন শনাক্ত হয় আর মারা যায় দুইজন। শনাক্তের হারও ছিল ১৫.২০ শতাংশ।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক বলেছেন, ‘করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত, তবে শঙ্কিত নই। আমরা প্রস্তুত আছি। হাসপাতালগুলো রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত রয়েছে। ’
এ ছাড়া তিনি জানিয়েছেন, ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের করোনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগের ৯৬৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৫ জন, বরিশালে ২৪ জন, খুলনায় ৩৭ জন, রাজশাহীতে ৩১ জন, ময়মনসিংহে ২৫ জন, রংপুর দুইজন ও সিলেটে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থার সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক জানান, ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের করোনা টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে জুলাই মাসের শেষের দিকে। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার হার বর্তমানে তুলনামূলক অনেক বেশি। এ জন্য করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত, তবে শঙ্কিত নই। আমরা প্রস্তুত আছি। হাসপাতালগুলো রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত রয়েছে। সংক্রমণ রোধে গত সপ্তাহে আমরা সভা করেছি। সেখানে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অফিস, স্কুলে মাস্ক পরে যাবেন। ট্রেনে-বাসে মাস্ক পরতে হবে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছি। ক্যাবিনেটসহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। জনগণ এ নির্দেশনা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছি। গত দু-তিন দিন ধরে দু-তিনজন করে মারা যাচ্ছে। সবার প্রতি আহ্বান, আপনার মাস্ক পরুন, টিকা নিন। ’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের হার গত ১৫ দিন অনেক কম ছিল। এখন অনেক বেশি। এর লাগাম টেনে ধরতে চাই, তবে আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। জনগণের সচেতনতা ও মাস্ক পরিধান করা জরুরি। সেটি হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সারা দেশে করোনায় আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে গত ২৬ জুন কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজের জন্য আবশ্যিকভাবে নিম্নবর্ণিত শর্তগুলো পালনের জন্য অনুরোধ করছে।
এগুলো হচ্ছে ১. মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে; ২. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে, সুন্নত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে; ৩. মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, মুসল্লিদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে; ৪. কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে; ৫. শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে; ৬. সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদের অজুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না; ৭. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে; ৮. করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে খতিব, ইমাম ও মুসল্লিরা দোয়া করবেন এবং ৯. সম্মানিত খতিব, ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা উপাসনালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..