‘ট্রেলার দেখে মনে হলো কোনো হলিউড সিনেমার ট্রেলার’, ‘এই প্রথম কোনো বাংলা সিনেমার ট্রেলার দেখে মুগ্ধ হলাম’, ‘হলিউডের টপ রেটিংয়ের মুভিটা থেকে এটার ট্রেলার কোনো অংশে কম নয়’, নেট দুনিয়ায় ভক্তদের এমন অনেক মন্তব্য ঘুরছে মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া সিনেমার ট্রেলার ঘিরে। দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির এক্সক্লুসিভ সিনেমা সাহস–এর ট্রেলারও। শুধু তা–ই নয়, গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া অনন্ত জলিলের ‘দিন: দ্য ডে’র ট্রেলার নিয়ে ফেসবুকের সিনেমাবিষয়ক গ্রুপগুলোয় ভক্তরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। কেউ ঝকঝকে ক্যামেরাকাজের প্রশংসা করেছেন, কারও ভালো লেগেছে সাউন্ড। চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া তিন সিনেমার ট্রেলারই নয়, গত ঈদে মুক্তি পাওয়া গলুই, শান, বিদ্রোহী ও ঈদের পর মুক্তি পাওয়া পাপ পুণ্য, তালাশ, অমানুষসহ বেশির ভাগ সিনেমার ট্রেলার প্রশংসা পেয়েছে।
এসব ট্রেলার দেখে বাংলাদেশের সিনেমার ট্রেলারে বড় বদল এসেছে, এমন মন্তব্য করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক ভক্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেলার দিয়ে দর্শক আকৃষ্ট করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রথমে আসা যাক হাওয়ার ট্রেলার প্রসঙ্গে। বাংলাদেশিরা তো বটেই, মেজবাউর রহমানের এই ছবির ট্রেলারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিচিত ইউটিউবারও। ট্রেলার প্রসঙ্গে মেজবাউর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি সিনেমা বানাতে চেয়েছি। গভীর সমুদ্রের গল্প। ট্রেলারজুড়ে মানুষ গভীর সমুদ্রের নানা পরিস্থিতি দেখেছেন। সমুদ্র মানে শুধু সমুদ্র। তীরের নামগন্ধ নেই। সমাজে আমরা যেভাবে বাস করি, সে ধরনের দৃশ্য এখানে নেই। যেহেতু ভিন্ন প্রেক্ষাপট, তাই ট্রেলারটি হয়তো সবার কাছে আলাদা লেগেছে। এটা আমাদের সার্থকতা।’
‘হাওয়া’র কালার গ্রেডিং, সংগীত, ক্যামেরার কাজগুলো আলাদাভাবে নজর কেড়েছে দর্শকদের, যা নিয়ে আনন্দিত পরিচালক। কারণ, পেশাদারদের ছাড়াই কাজগুলো করেছেন তাঁরা! ‘ট্রেলারের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অনেক প্রশংসা পাচ্ছি। এটা আমার ব্যান্ডের (মেঘদল) গিটারিস্ট শোয়েব করেছে। ইন্ডাস্ট্রির প্রফেশনালদের সহায়তা ছাড়াই আশপাশের মানুষ, বন্ধুরা মিলেই পুরো সিনেমার সব কাজ করেছি,’ বলেন মেজবাউর রহমান।
কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ছবির ট্রেলার প্রশংসিত হয়েছে, তার মধ্যে মিশন এক্সটিম–এর ট্রেলার একটি। সিনেমাটির পরিচালক সানী সানোয়ার দর্শকদের আকৃষ্ট করতে আলাদাভাবে নজর দিয়েছিলেন ট্রেলারে। পরিচালক বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক–এর সময়ও আমরা আলাদা দক্ষ দক্ষ পেশাদার দিয়ে ট্রেলার কাটিয়েছি। কারণ, তাঁদের ধারণাটাই আলাদা। ট্রেলার সিনেমার কোয়ালিটি, আয়োজন, আর্টিস্ট, স্টোরি সম্পর্কে ধারণা দেয়, যা দেখে দর্শকেরা সিদ্ধান্ত নেন সিনেমাটি দেখবেন কি না। এ জন্য ট্রেলার বানানোর আলাদা পেশাদার লোক দরকার। আমরা ট্রেলারের জন্য আলাদা বাজেট রাখি। এ জন্য ট্রেলারের কাজ দেশের বাইরে করে সিনেমার মান ধরে রাখতে চাই।’
শুধু সিনেমা হলে দর্শক টানতেই নয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোও দর্শক টানতে প্রধানত গুরুত্ব দিয়ে থাকে ট্রেলারকে। এ ক্ষেত্রে ওটিটিগুলোর প্রতিযোগিতা আরও বেশি। যে কারণে শুরু থেকেই চরকির ঊনলৌকিক, মরীচিকা, রেডরাম, টান, নিখোঁজসহ সব প্রোডাকশনে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি। তিনি বলেন, ‘নির্মাতা তাঁর সিনেমা নির্মাণ করেন। কিন্তু ট্রেলার নির্মাণে আমাদের অনেক ইনপুট থাকে। এ জন্য আমাদের আলাদা পেশাদার টিম আছে। তারা দর্শকদের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনে নতুন করে ট্রেলার বানায়। সাবস্ক্রিপশন ব্যবসায় এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেলারে ইতিবাচক সাড়া অবশ্যই প্রয়োজন।’
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯১৩ সাল থেকে নিয়মিত সিনেমার ট্রেলার তৈরি হচ্ছে। ধারণা করা হয়, এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া ৯০ ভাগ সিনেমার ট্রেলার তৈরি হয়েছে। দর্শকদের সঙ্গে সিনেমাটির প্রাথমিক পরিচয় করিয়ে দিতেই মূলত ট্রেলার তৈরি করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দৈর্ঘ্য হয় তিন মিনিটের মধ্যেই।
এ জাতীয় আরো খবর..