অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে পলাতক আখ্যা দিয়ে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পলাতক থাকায় এ মামলায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেন না। মামলাটি পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে চাইলে তারেক-জোবাইদাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
মামলাটির বৈধতা নিয়ে তারেক-জোবাইদার তিনটি রিট গ্রহণযোগ্য না উল্লেখ করে রবিবার এ রায় দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে এ তিন রিটে দেওয়া রুল খারিজ করা হয়।
আদালতে তারেক-জোবাইদার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিকও শুনানি করেন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আদালত রায়ে বলেছেন, আইনের চোখে তারেক রহমান পলাতক। আত্মসমর্পণ না করলে তিনি আইনি সুবিধা পেতে পারেন না, চাইতেও পারেন না। তার পক্ষে কোনো আইনজীবীর দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। আর গত ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ে এসেছে, জোবাইদা রহমান পলাতক। যে কারণে তারও মামলা চালানোর এখতিয়ার নেই। তার পক্ষেও কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেন না।
দুদকের এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক রহমানের দুটি আর জোবাইদা রহমানে একটি রিট মামলায় রুল খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছেন আদালত। ফলে এ মামলার কার্যক্রম চলতে আপাতত আর কোনো বাধা থাকছে না। ’
খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘রায়ে মুখ্য মহারগর হাকিমকে বলেছেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে তিনি যেন মামলার নথি জ্যেষ্ঠ মহানগর বিচারকের আদালতে পাঠিয়ে দেন। আর মামলা নথি পাওয়ার পর তিনি যেন মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত নিষ্পত্তি করেন। ’
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক।
মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার পর ওই বছরই তারেক রহমান ও জোবাইদা মামলার বাদীর কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে তিনটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ২০০৭ সালের ১ অক্টোবর আদালত মামলার কার্যাক্রম স্থগিত করার পাশাপাশি রুল দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ১০৯-এর সাথে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা ২০০৭-এর ১৫(ঘ)(৫) বিধি মিলিয়ে কাফরুল থানায় করা মামলাটি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এ রুলটি বিচারাধীন রেখে ২০০৮ সালে আরেকটি আবেদন করেন জোবাইদা রহমান। এ আবেদনে মামলা বাতিল চাওয়া হয়। সে আবেদনের শুনানির পর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রুল খারিজ করে দেন আদালত। সেই সঙ্গে জোবাইদা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন জোবাইদা রহমান। ওই আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এ আদেশের পর মামলার তদন্ত বা বিচারকাজ চলার ক্ষেত্রে বাধা কাটলেও ওই তিনটি রিটে এ মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল থাকে।
পরে গত ২৯ মে এই তিনটি রিট হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন তারেক-জোবাইদার রিটের পক্ষে শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময় চান আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সেদিন পলাতক তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী সময়ের আরজি জানাতে পারেন কি না, সে প্রশ্ন রাখেন দুদকের আইনজীবী। এরপর ৫ জুন পরবর্তী শুনানির দিন আপিল বিভাগের রায় উপস্থাপন করে এ মামলায় তারেক রহমানের পাশাপাশি জোবাইদা রহমানকেও পলাতক দাবি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
সেদিন দুদকের আইনজীবী তারেক-জোবাইদা দুজনকেই পলাতক উল্লেখ করে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ নিয়ে গত ১২ জুন শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য রাখেন।
এ জাতীয় আরো খবর..