×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৬
  • ৬৫ বার পঠিত
সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি কমছে। সিলেটে পানি ধীরে নামায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে না দুর্গতরা। সুনামগঞ্জে রাস্তাঘাটে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে চলাচল করা যাচ্ছে না।

সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের পরও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। টাঙ্গাইলে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। কুড়িগ্রামে বাড়ছে ভাঙন।
গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, সারা দেশে বন্যায় ১৭ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ৮২ জন মারা গেছে। আগের দিন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৭৩। এর মধ্যে সিলেটে ১৮, সুনামগঞ্জে ২৬, ময়মনসিংহে ৫, নেত্রকোনায় ৯, জামালপুরে ৯, শেরপুরে ৪, লালমনিরহাটে ১, কুড়িগ্রামে ৩, হবিগঞ্জে ৩ ও মৌলভীবাজারে ৪ জনের মৃত্যু হয়।   

সিলেটে সুরমা নদীসংলগ্ন উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল এখনো জলমগ্ন। কুশিয়ারা নদীসংলগ্ন উপজেলাগুলোতে পানি কমলেও এসব উপজেলার বেশির ভাগ অংশই ডুবে আছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এত দিন বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি এখন বিপত্সীমার দুই পয়েন্ট নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলায় পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২৮। এর মধ্যে ২১ জনই ডায়রিয়ার রোগী। গতকাল ভর্তি হন ৯ জন।

জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সিলেট সদরে আগের দিনের তুলনায় গতকালও পানি কমেছে। তবে স্থানীয়রা জানায়, পানি নামছে খুব ধীরে। এতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের বাড়ি ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে।

সিলেট সদর উপজেলার শিবের বাজার, জালালাবাদ, হাটখলা ও কান্দিগাঁও ইউনিয়নে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি থেকে পানি নামছে। তবে এসব ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি আটকে আছে। উপজেলার রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে যাওয়ায় জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। একই চিত্র সুরমা নদীসংলগ্ন সব কটি উপজেলায়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের হারুন আলী বলেন, ‘বন্যার পানি কমছে। তবে খুব আস্তে। আমাদের এখানে সাধারণত পানি নামা শুরু হলে দ্রুত নেমে যায়। সে তুলনায় এবার অনেক ধীরে নামছে। ’

কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধিতে ডুবে যাওয়া জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের একাংশ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জে আগের দিনের তুলনায় গতকাল পানি আরো কমেছে। বিশেষ করে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে বন্যার পানি আগের দিনের তুলনায় কমেছে।

সুনামগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলার সঙ্গে এখনো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। পৌর শহরের রাস্তাঘাটে জমে আছে ময়লার স্তূপ। আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। গতকাল বিকেলে দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি বাজারে বিজিবি পরিবার কল্যাণ সমিতি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে।

সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘বন্যায় এখনো শহরের কিছু রাস্তাঘাট ডুবে আছে। বন্যায় ভাগাড় থেকে আবর্জনা রাস্তাঘাটে গিয়ে জমেছে। আমরা দ্রুত সেগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। ’

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি কমছে। পানি নামতে শুরু করেছে। তবে হাওরবেষ্টিত এলাকা থেকে পানি কিছুটা বিলম্বে নামছে। ’

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে এখনো বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই , শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পানি কমে গেলে আমরা দ্রুত সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করব। ’

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কিছু বাসাবাড়িতে এখনো পানি আছে। তাই সবাই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি যেতে পারছে না। তাদের বসতবাড়ি বসবাসের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে। ’

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নেমে গেছে বিপত্সীমার নিচে। তবে চর ও নদ-নদী অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনো পানি আছে। এখনো পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগেও দুর্গতদের দুর্ভোগ কমছে না। অনেক চরাঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছেনি। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার ও গোখাদ্যের তীব্র সংকট।

জেলা পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩০টি পয়েন্টে কমবেশি ভাঙন চলছে। এর মধ্যে তিস্তার ১৩টি পয়েন্টে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি ও বসতভিটা। তিস্তার সরিষাবাড়ী, অর্জন, বজরা, বুড়িরহাটসহ কয়েকটি এলাকায় স্কুল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ধরলা নদীর বাংটুরঘাট, বড়াইবাড়ি, সারডোব, মেকলি, দুধকুমারের রায়গঞ্জ, ঘোগাদহ, বামনডাঙা, ব্রহ্মপুত্রের যাত্রাপুর, খাউরিয়া, মোল্লারহাট এলাকায় বিলীন হয়েছে কয়েক শ বসতভিটা।   

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তার ভাঙন রোধে কোনো প্রকল্প না থাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

টাঙ্গাইলে যমুনাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। কিন্তু চরম দুর্ভোগে পানিবন্দি মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবের পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। চরাঞ্চলে রয়েছে গোখাদ্যের সংকট।

টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, নাগরপুর, গোপালপুর, দেলদুয়ার ও বাসাইল উপজেলার শতাধিক গ্রামের পানিবন্দি মানুষ কষ্টে জীবন যাপন করছে। জেলায় মোট আট হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘নদীর পানি সরে গেলে ভাঙন আরো বাড়বে। ভাঙন রোধে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’

কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ী, দুর্গাপুর, সল্লা ইউনিয়ন এবং এলেঙ্গা পৌরসভার কিছু অংশের মানুষ পানিবন্দি। ভূঞাপুরের যমুনা চরাঞ্চলের গাবসারা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামে যমুনার পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করেছে। পানির স্রোতে কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে মাটির চুলা, গবাদি পশু রাখার স্থান, শৌচাগার, টিউবওয়েলসহ চরাঞ্চলের নানা ধরনের ফসল ও সবজি। পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে ঘরেই মাচা করে রান্না করাসহ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বাসাইল ও মির্জাপুরে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।

কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, অসংখ্য পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারিভাবে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় কম।

জেলা প্রশাসক আতাউল গণি জানান, বন্যার্তদের সরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat