শরীফুল ইসলাম ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। গত রোববার রাতে সেখানেই একটা ফোন এল। পরিচিত নম্বর। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভরাট কণ্ঠে জানতে চাওয়া হলো, ‘টেস্ট খেলবা?’
শরীফুলের চট জলদি জবাব, ‘যদি পাঠান খেলব।’
‘তাহলে তৈরি হয়ে নাও। কালই যেতে হবে।’
শরীফুল আর দেরি করেননি। বোর্ড সভাপতির ডাক বলে কথা! এর মধ্যে আবার অ্যান্টিগা থেকে পেয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ফোন, ‘আসছিস তো...?’ শরীফুল আশ্বস্ত করেন, ‘জি ভাই, আসছি...।’ এরপর ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে সোজা ঢাকায়। সেখান থেকে গত সোমবার এমিরেটসের ফ্লাইট ধরে দুবাই-লন্ডন-বারবাডোজ হয়ে মঙ্গলবারই পৌঁছে গেছেন সেন্ট লুসিয়ায়।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই বিদেশ সফর করছেন। কিন্তু একা একা এতটা পথ শরীফুল উড়লেন এই প্রথম, প্রথম এলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। তবু বারবাডোজ থেকে এয়ারএন্টিলেসের ছোট্ট বিমান আকাশে উড়তেই বাঁহাতি পেসার শরীফুলের দৃষ্টি খুঁজে নিল সবুজ বৃত্তাকার কেনসিংটন ওভাল, ‘ওই যে দেখেন ওদের ক্রিকেট মাঠ। ওটাই তো! টিভিতে দেখেছি মাঠটা সমুদ্রের কাছে...।’
বিমান ততক্ষণে বারবাডোজের মূল ভূখণ্ড পেরিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। শরীফুল কিছুটা অস্থির, ‘আচ্ছা ভাই, ফ্লাইটটা তো বেশিক্ষণের না তাই না...।’ ৪০ মিনিটের ফ্লাইট শুনে আশ্বস্ত হয়ে বললেন, ‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’ শরীফুল অবশ্য ঘুমাননি। ফ্লাইটের সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন মুঠোফোনে গেম খেলে।
ঢাকা থেকে এক রাতের নোটিশে যেভাবে উড়ে এসেছেন, ঘুম পাওয়াটা যদিও স্বাভাবিকই ছিল। সব মিলিয়ে ২৭ থেকে ২৮ ঘণ্টার বিমানভ্রমণ। শরীফুল অবশ্য আঙুলে গুনে হিসাব করলেন, এই ২৭ থেকে ২৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন, ‘প্লেনে আমার খুব ভালো ঘুম হয়। আমি তো দুবাইয়ে নেমে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জেও ঘুমিয়েছি।’
ঘুম প্রসঙ্গে নিজের সম্পর্কে একটা মজার তথ্যও জানালেন, টেনশনের সময় নাকি তাঁর ঘুম চলে আসে! শুনে বারবাডোজ থেকে সেন্ট লুসিয়ার ফ্লাইটে শরীফুলের সঙ্গী বাংলাদেশের দুই সাংবাদিকের একজনের রসিকতা, ‘বলেন কী! ধরুন ম্যাচের শেষ ওভারটা করতে আপনাকে বল দেওয়া হলো। ৬ বলে ৭/৮ রান দরকার। প্রচণ্ড টেনশন হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেই টেনশনে যদি তখন মাঠেই আপনার ঘুম চলে আসে...!’
রসিকতাটা ধরতে পেরে শরীফুল না হেসে পারেননি। আর সে হাসিতে ঢাকা পড়ে যায় সব ক্লান্তি। চেহারায় খেলে যাওয়া ঝিলিকটা যেন এও বুঝিয়ে দিল, ভ্রমণক্লান্তি যতই থাকুক, তিনি মাঠে নামতে প্রস্তুত।
সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ জুন থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ দলে দ্বিতীয় টেস্ট। শরীফুলকে যে এই টেস্টের একাদশে রাখার জন্যই এত তাড়াহুড়া করে উড়িয়ে আনা হয়েছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। নইলে আরও দু-এক দিন পরেও আসতে পারতেন তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, অধিনায়ক সাকিব ও কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছ থেকে ঢাকায় একজন বাড়তি পেসারের চাহিদাপত্র গেছে। সেটি সম্ভবত দ্বিতীয় টেস্টে মোস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিতেই। ওদিকে শরীফুলও চোট থেকে প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠায় নির্বাচকদের তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়ে যায়।
নির্বাচকদের ভাবনায় অবশ্য আগে উঁকি দিয়েছিল তাসকিন আহমেদের নাম। পেসারদের মধ্যে তাসকিনই যে এখন যেকোনো সংস্করণে সবার প্রথম পছন্দ! টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দলে থাকায় এমনিতেই তাঁর ২৪ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার কথা। এর মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্ট যখন ঢাকায় একজন বাড়তি পেসার চেয়ে পাঠায়, স্বাভাবিকভাবে সবার আগে তাসকিনের নামই আলোচনায় আসে। তাসকিন নিজেও টেস্টে ফিরতে ব্যগ্র হয়ে আছেন। কিন্তু ঢাকায় অনুশীলনে পিঠে মৃদু সমস্যা বোধ করায় শেষ পর্যন্ত আর তাঁকে আগে পাঠানোর ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। আগের সূচি অনুযায়ী তাসকিন বিমানে উঠবেন ২৪ জুন।
এ সুযোগে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট দিয়ে শরীফুলের অভিষেক হয়ে যেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। দীর্ঘ বিমানভ্রমণের ধকল কাটিয়ে এখন সেই রোমাঞ্চ নিয়েই অপেক্ষা তাঁর।
রোমাঞ্চ, ‘টেনশন’ কিন্তু নয়।
এ জাতীয় আরো খবর..