'বন্যায় বাংলাদেশসহ ভারতের আসাম, মেঘালয়, চেরাপুঞ্জির অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বড় দায় রয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রায়ই বন্যা দেখা দিলেও এবারের বন্যার অস্বাভাবিক ব্যাপকতা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর পেছনে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের প্রাকৃতিক হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী এলাকাসহ বিভিন্ন জলাশয়-জলাভূমির পানি ধারণ ক্ষমতা ক্ষমতা হ্রাস ও স্বাভাবিক পানি প্রবাহের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের দায় অস্বীকার করা যাবে না। তাই বন্যা থেকে বাঁচতে এসবের রক্ষা করতে হবে বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)'।
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি ও জীবন ও জীবিকার অপূরণীয় ক্ষয়-ক্ষতি ও জনগণের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে আইপিডি। এই বন্যায় এই মুহূর্তে দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সাধারণ জনগণ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে আইপিডি।
এতে বলা হয়, বিগত দশকগুলোতে হাওর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলার প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার উপাদানসমূহকে আমরা যেভাবে বিনষ্ট করে আমাদের সমূহ বিপদ ডেকে নিয়ে এসেছি তাকে উপেক্ষা করলে সামনের দিনগুলোতে আরো বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশেই দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশংকা করা হচ্ছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী বছরগুলোতেও নিয়মিতভাবে দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশ মৌসুমি বায়ুর অঞ্চল হওয়াতে বন্যার সাথে বসবাস করবার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবার কথা ছিল, সেই মূলনীতি থেকে সরে গিয়ে আমরা প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও জলধারণ এলাকা নষ্ট করে চলেছি। এই চিত্র শুধু ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকার নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে।
এতে আরো বলা হয়, হাওর বা এ ধরনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাতে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ বা যেকোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে পরিবেশগত সমীক্ষা ও পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে কবার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে আদর্শগত পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী পরিকল্পনা হয়ে থাকে তাকে অনুসরণ না করার দায় আছে। বলা হয়, কোনো কোনো প্রকল্পে এই ধরনের সমীক্ষা করা হলেও সেটা কেবল প্রকল্পকে বৈধতা দেওয়া ও পদ্ধতিগত অনুশাসন নিশ্চিত করর জন্যই করা হয়। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশগত এবং জীবন-জীবিকার ওপর এই ধরনের উন্নয়ন উদ্যোগ ও ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা ও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার ফলে ভবিষ্যতের জন্য আসন্ন বিপদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় যার শিকার হয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতি।
এতে বলা হয়, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বানভাসীদের সহযোগিতায় সরকারে পক্ষ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা বিপন্ন মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাজেটের পরিমাণ অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার-আশ্রয় ও পুনর্বাসনে সমন্বিত কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
এ জাতীয় আরো খবর..