×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-১৮
  • ৫৮ বার পঠিত
হাট অথচ কাঁঠাল ছাড়া অন্য কোনো পণ্য নেই। এ জন্যই নাম কাঁঠালের হাট। পাহাড়ি সড়কের এক কিলোমিটারজুড়ে দুই পাশে শুধুই জাতীয় এই ফলের স্তূপ। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের কাঁঠালের হাট এটি।

জেলার সর্ববৃহত্ এই হাটের বিক্রেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি আলাপ করে জানা গেল, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পাশের উপজেলাগুলো থেকেও বাগানি বা ব্যবসায়ীরা প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে কাঁঠাল জড়ো করতে শুরু করেন। লক্ষ্য থাকে শনিবারের হাট। তবে তিন দিনই কেনাবেচা হয়। চট্টগ্রাম, ঢাকার পাইকাররা এই হাট থেকে কাঁঠাল কিনে নেন। দাম আকারভেদে ৩০ থেকে ১০০ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তন্ময় দত্ত জানান, উপজেলার ৫৪০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর প্রায় ২৪,৫০০ টন কাঁঠাল উত্পাদিত হয়। আর জেলায় ৩০০৫ হেক্টর জমিতে উত্পাদন প্রায় ৭৮,৩৫০ টন।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিও কাঁঠালের জন্য প্রসিদ্ধ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির উপপরিচালক তপন কুমার পাল জানান, এই জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৩,৩৭৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের বাগান রয়েছে। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৯৬ হাজার ১৮৮ টন।

তবে কাঁঠালের রাজধানী বলা হয় গাজীপুর জেলাকে। এই জেলার পাঁচ উপজেলাই প্রচুর কাঁঠালের ফলন হয়। তবে স্বাদ, মিষ্টতা, ঘ্রাণ ও আকারের দিক থেকে শ্রীপুরের কাঁঠালের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। ধানের পর এটি জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। গাজীপুরের বাড়িতে বাড়িতে এখন পাকা কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রতিবছর দুই লাখ ৮০ টন কাঁঠাল উত্পাদিত হয়, যার বাজারমূল্য ৪০০-৫০০ কোটি টাকা।

শ্রীপুরের তেলিহাটি এলাকার বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, সাত-আট বছর আগে জেলায় হাজার কোটি টাকার কাঁঠালের ফলন হতো। ব্যাপক হারে কলকারখানা গড়ে ওঠায় উঁচু জমি কমে আসছে। অন্য গাছপালার সঙ্গে কাঁঠালগাছ কাটা পড়ছে। গাছ কমায় ফলনও কমছে।

জেলায় সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার শ্রীপুরের জৈনা বাজার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কিনতে এ বাজারে আসেন। দিন-রাত চলে কাঁঠাল বেচাকেনা। এ ছাড়া শ্রীপুরের বরমী, কাপাসিয়ার রানীগঞ্জ, কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া, সদরের ভাওয়াল মির্জাপুর ও কালিয়াকৈরের সফিপুরে বসে কাঁঠালের হাট।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উত্পাদন হয়েছে। তিনি বলেন, পাকা কাঁঠাল দুই-এক দিনেই পচে যায়। প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতি থাকলে কাঁঠাল দীর্ঘদিন পরেও খাওয়া যেত। এতে দামও ভালো পাওয়া যেত।

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বত্রই কাঁঠাল হয়। তবে লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এর ফলন বেশি। তবে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে এবং মোট উত্পাদন ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ টন (সূত্র : উদ্যানতত্ত্ব অনুবিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর)।

লালচে মাটি হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে ভালুকা উপজেলা কাঁঠালের জন্য সুপরিচিত। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রায় ছয় হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল আবাদ হয়। আর উত্পাদন প্রায় এক লাখ ৯৭ হাজার ৯১৩ টন।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান জানান, ভালুকার মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। গতবারের মতো এবারও ভালুকায় ৪০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৬০০ টন।

এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলেও কাঁঠালের ফলন বেশ। এর মধ্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বেশি কাঁঠাল হয়। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আশিক পারভেজ জানান, এবার জেলার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে। উত্পাদন হবে প্রায় ১৩ হাজার টন।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হবিগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলের সড়কে অবস্থিত মুছাই আড়তে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি হয়। জেলার সবচেয়ে বড় এই আড়তে প্রতি ১০০ হিসাবে নিলামের মাধ্যমে কাঁঠাল বিক্রি হয়।

এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় ২১৮০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালবাগান রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো জানান, জেলায় কাঁঠাল উত্পাদন হয় প্রায় ৪৩ হাজার ৬০০ টন। সবচেয়ে বেশি হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলায়।  

শ্রীমঙ্গলের কাঁঠাল বাগানের মালিক শাহেদ বলেন, বাজারে প্রতি পিস কাঁঠাল পাইকারি ৩০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় ৬০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়।

এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, এবার জেলায় ৫৯০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের কৃষক নাইম ইসলাম বলেন, ‘এবার এক গাছ থেকেই ২৫ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছি, যা কখনোই হয়নি। গতবার গোটা বাগান মিলেও ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করতে পারিনি। এবার অন্তত দেড় লাখ টাকার কাঁঠালই বিক্রি হবে আমার। ’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat