বিএনপি তার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাঠামো না ভাঙলেও তা অকার্যকর করে রেখেছে। দুই জোটকে অকার্যকর রেখেই অন্যদের নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বৃহৎ এই জোটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অভিন্ন কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলন করা—যেভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। এরই মধ্যে যে কটি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সবাই যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামতে একমত হয়েছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মিত্র দলগুলোকে নিয়ে এক মঞ্চে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
kalerkanthoবিএনপি গত ২৪ মে থেকে সব সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে তাদের আন্দোলনে যুক্ত করার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু করেছে। ‘শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়’—এই দাবিতেই মূলত আলোচনা চলছে। এক মঞ্চে আসার পর আরো তিনটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা।
ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণে অনেক রাজনৈতিক দল একমত হয়ে আন্দোলন করলে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হবে। এ দাবির সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সম্পৃক্ততা দেখলে বিদেশিরাও ভাবনার খোরাক পাবে। এতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, যার সুফল দ্রুত পাওয়া যাবে।
জোট অকার্যকর রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, এটা তাঁদের কৌশল। কারণ একটি জোট কার্যকর রেখে বিএনপির নেতৃত্বে আরেকটি জোট গঠন হলে ভুল-বোঝাবুঝি হবে। এতে শুধু দলের সংখ্যা বাড়বে, বৃহৎ ঐক্যের শক্তি তৈরি হবে না। তা ছাড়া জামায়াতকে নিয়ে যাদের অভিযোগ আছে, এতে তারাও যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হবে। এরই মধ্যে নাগরিক ঐক্য ও গণসংহতি আন্দোলনসহ সাতটি দলের সঙ্গে বিএনপির ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আরো অন্তত ২৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ হবে।
ঐক্যপ্রক্রিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্তদের একজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের শীর্ষ নেতা লন্ডন থেকে যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে তাঁরা সব মহলকে বোঝাতে পেরেছেন যে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন চায় না বিএনপি। সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়। বৃহৎ ঐক্য গঠনের এই প্রক্রিয়ায় শীর্ষ নেতার বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একমঞ্চে আসার আগে-পরে বিএনপি চারটি বিষয় নিয়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। প্রথমটি হচ্ছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে এবং এ বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো।
দ্বিতীয়ত, একসঙ্গে যেসব দল দীর্ঘ মেয়াদে পথ চলতে চায় তাদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করা। তৃতীয়ত, নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো নিয়ে আলোচনা এবং শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনায় নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপি ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের ক্ষেত্রে একমত হলেও দলগুলোর মধ্যে কিছুটা আস্থার সংকট এখনো আছে। শেষ পর্যন্ত এই দলগুলো বিএনপির সঙ্গে থাকবে কি না, তাও আলোচনায় আছে। কিছু দলের নির্বাচনের সময় সরকারের সঙ্গে ভিড়ে যাওয়ার প্রবণতা অতীতে দেখা গেছে। আর মিত্র দলগুলো ভাবছে, আন্দোলন সফল হলে বিএনপি লাভবান হবে বেশি। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করবে কি না। এ কারণে বৈঠকে সব দলই রাষ্ট্র সংস্কার ও সরকারে গেলে কী করা উচিত; এমন কিছু লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছে।
জোট ভাঙা নিয়ে দলে দ্বিমত
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট থাকবে, না ভেঙে দেওয়া হবে—এ নিয়ে দলের মধ্যে দ্বিমত আছে। দলের একটি অংশের নেতারা আগের জোট ভেঙে বৃহৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে একটি রূপ দেওয়ার পক্ষে। তবে কারো কারো মতে, জোট ভেঙে দিলে সরকারকে একটি হাতিয়ার তুলে দেওয়া হবে। কিছু দলকে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে সঙ্গে ভেড়াবে।
বিএনপির এক নেতা বলেন, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর—এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এই জোটকে কার্যকর করা যাবে না। আবার কার্যকর করা গেলেও এটি বৃহৎ ঐক্যের কাজে বাধা সৃষ্টি হবে।
২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির সঙ্গে আলোচনার পর দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, জোটকে অকার্যকর করা ঠিক হবে না। ২০ দলকে কার্যকর করতে না পারলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সুফল পাওয়া কঠিন হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে মিত্র দলগুলো একমত হয়েছে। আরো আলোচনা চলছে। সপ্তাহ দুই-তিনেক পর বৃহৎ জোট সামনে আসবে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, জোট ভাঙার ব্যাপারে এখন আলোচনা চলছে না। তবে সুনির্দিষ্টভাবে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট এখন কার্যকর না—এটা বলা যায়।
এ জাতীয় আরো খবর..