×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-১১
  • ৪৯ বার পঠিত
এবারের বাজেটে শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। এতে করপোরেট ব্যবসায়ীরা সব সুবিধা পাবেন আর অর্থমন্ত্রীর ক্লায়েন্টদের স্বার্থই রক্ষা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে গণতান্ত্রিক গার্মেন্ট শ্রমিক ফোরাম আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, জনপ্রশাসন, আমলা, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য ব্যয় হবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন দেশ থেকে যে ধার করেছেন, সে ধার বাবদ যাবে প্রায় ১৬ শতাংশ। এর সবই শ্রমিক-কৃষকদের টাকা থেকে যাবে। কিন্তু করপোরেট ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে ধার শোধ হবে না, বরং তারা পাবে সব সুবিধা। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, বাজেটে শ্রমিক-কৃষকের কথা না বলায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা না থাকায় আন্দোলন অব্যাহত রাখুন। কারণ কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি না হলে দেশের মুক্তি হবে না। বাজেটে কৃষকের জন্য, শ্রমিকের জন্য কোথায় বরাদ্দ? উচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের ঠিকই বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বাজেট কৃষক শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি।
তিনি বলেন, 'দেশের প্রত্যেকটা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় বাবা-মা-সন্তানসহ পাঁচজনের পরিবারের খাবার খরচ যায় মাসে ২১ হাজার টাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, সরকারি মাস্তানের খরচ- এই সব মিলিয়ে কত টাকা লাগে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই বোঝেন। '

প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সম্প্রতি একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, পদ্মা সেতু। আপনি পরিশ্রমে এত ক্লান্ত, তার ওপর আবার তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। এই ক্লান্তির কারণে সম্প্রতি আপনি গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কী করেছেন তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? বেতন বৃদ্ধি চাইলে আমও যাবে ছালাও যাবে। শ্রমিকদের আম-ছালা যাবে, কিন্তু আপনার মসনদ থাকবে তো?

এ সময় তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ করে বলেন, 'আপনারা যেভাবে দেশকে ভালোবাসেন, দেশের জন্য শ্রম দেন, কিন্তু আপনারা কিভাবে চলাফেরা করেন, সে ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। শ্রমিকদের শুধু ২০ হাজার টাকা বেতন দিলে হবে না। তাদের সন্তানকে বিনা বেতনে শিক্ষা দিতে হবে, পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি দুই বছর ধরে বলছি শ্রমিকদের রেশন দেন। যে রেশন আপনি সামরিক বাহিনীতে দিয়ে যাচ্ছেন। যে রেশন পুলিশ-গোয়েন্দা বাহিনীকে দিয়ে যাচ্ছেন। মাসে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে বিনা পয়সায় সকল প্রকার অপারেশন ও ওষুধপত্রসহ চিকিৎসাব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, আপনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন। নোবেল পুরস্কার পেতে হলে আপনাকে আমাদের সুপারিশ সুচিন্তিতভাবে আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে শ্রমিকদের বেতন, বাড়িভাড়ার সাবসিডি, চিকিৎসাভাতা, তাদের সন্তানদের শিক্ষা খরচ দিতে হবে। তাহলে পৃথিবী বুঝবে আপনি কার পক্ষের লোক। এখন পৃথিবী জানে আপনি করপোরেট শক্তির লোক।

তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতুর জন্য অবশ্যই অভিনন্দন জানাই। তবে খোলা মনে অভিনন্দনটা জানাতে পারছি না। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকায়। হতে পারে, খরচ বেড়েছে, জীবনযাত্রার সব কিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু অনুগ্রহ করে হিসাবটা দেন। '

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, 'জাতীয় সংসদে যে প্রায় সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে তার উৎস কী? এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে শ্রমিক শ্রেণি। শ্রমিকরা যদি উপেক্ষিত হয় বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হবে না। তাদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা খুবই সামান্য দাবি। যেভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে, তাতে শ্রমিকের জীবনযাপন কঠিন হয়ে গেছে। শ্রমিক ভালো না থাকলে দেশের উন্নয়ন-উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। সুতরাং ক্ষমতাসীন অগণতান্ত্রিক সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। আসুন কৃষক-শ্রমিক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হই। '

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, 'আমাদের গার্মেন্ট শ্রমিকরা আজকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ চার দফা নিয়ে তারা আজকে রাজপথে নেমে এসেছে। তাদের রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি এক বছর করা এবং পূর্ণ বেতন প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদেরকে বীমার আওতায় আনতে হবে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের এসব দাবির প্রতি ভাসানী অনুসারী পরিষদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। রপ্তানি খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া অত্যাবশ্যক। কেননা শ্রমিকদের জীবনের কোনো উন্নয়ন না ঘটলে ও ন্যায্য মজুরি না পেলে রপ্তানি খাতও সংকটে পড়বে। কেননা শ্রমিকরা আজকে অমানবিকভাবে জীবনযাপন করছে। তবুও কাজ করে যাচ্ছে এবং রপ্তানি খাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

শ্রমিকদের দাবি না মানলে পরিণতি ভালো হবে না মন্তব্য করে বাবুল বলেন, বিএনপির উচিত হবে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। তাহলে এই সরকার একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে এবং দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। '

গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফোরামের সভাপতি আব্দুল আলীম স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিজু, শ্রমিক নেতা বাবুল বিশ্বাস, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা কাজী মো. নজরুল, শাফায়াত কামাল দিব্য, মোজাম্মেল হক মাস্টার প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat