আবারও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রবিবার একবারে কমানো হয়েছে এক টাকা ৬০ পয়সা। আর গতকাল সোমবার কমানো হয়েছে ৪৫ পয়সা। ফলে দুই দিনে টাকার মান কমল দুই টাকা পাঁচ পয়সা।
এর ফলে সর্বশেষ প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এই নতুন দামে ডলার বিক্রি করেছে। এর আগে ডলারের দাম ছিল ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের এই দাম নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে একদিকে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। তার পরও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না।
বাজারের ওপর ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার পর টাকা আরো সস্তা হয়েছে, সর্বশেষ প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর এ নিয়ে তিন দফায় ডলারের দাম বাড়ল। আর মে মাসে চার দফা কমেছিল টাকার মান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। গতকাল ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দিতে এক কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর যত রকম পদক্ষেপ আছে সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আমদানি ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে আমরা রপ্তানিতেও ইনক্রিমেন্টাল ডলার পাচ্ছি না। আমরা চাইলেই জনশক্তি রপ্তানি রাতারাতি বাড়াতে পারব না। করোনার কারণে হুন্ডি মার্কেট বন্ধ ছিল। এখন আবার তা খুলে গেছে। এদিক থেকেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে যত পারা যায় ব্যবস্থাটিকে সহজ করতে হবে। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে পাইপলাইনে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প আছে, সেগুলোর দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘ভারতসহ অনেক দেশ মুদ্রাবাজারের চাপ সামলাতে মুদ্রার কিছুটা অবমূল্যায়ন করছে। আমাদেরও এটা মেনে নিতে হবে। তবে আমাদের মতো যারা বেশি আমদানিনির্ভর দেশ, তারা হয়তো একটা পর্যায়ের বেশি অবমূল্যায়ন করতে পারবে না। কিন্তু একটা যৌক্তিক পর্যায়ে অবমূল্যায়ন করতেই হবে। ২০ পয়সা, ৪০ পয়সা করে না কমিয়ে যৌক্তিকভাবে যত শতাংশ কমানো দরকার, তা একবারেই কমিয়ে ফেলা উচিত। এটা বাজারের অস্থিরতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার অপারেশন (স্টেরিলাইজেশন) কুশলীভাবে আরো কিছু সময় চালিয়ে যেতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..