×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-১২
  • ৫৮ বার পঠিত
অ্যাথলেটিকসের ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে সব সময়। রেকর্ডবই যে বারেবারে উল্টেপাল্টে দেখতে, বইয়ে নতুন পাতা যোগ করতে বাধ্য করেছেন মো ফারাহ। কিন্তু অলিম্পিকে চারটি ও বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ছয়টি সোনা নিয়ে ম্যারাথনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনাজয়ী অ্যাথলেটের রেকর্ড বুঝি একটু বদলাতে হচ্ছে।

রেকর্ডের পাশে নামটাই যে বদলানোর দরকার পড়তে পারে। কেন? মো ফারাহর আসল নামই যে মো ফারাহ নয়! বিবিসিতে প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য রিয়েল মো ফারাহ’-তে ৩৯ বছর বয়সী অ্যাথলেট জানিয়েছেন, তাঁর আসল নাম হোসাইন আবদি কাহিন। ৯ বছর বয়সে পাচারের শিকার হয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর তাঁর পরিচয় কীভাবে বদলে গিয়েছিল, শিশুশ্রমিকের জীবন থেকে কীভাবে ইতিহাসের সেরা ম্যারাথনার হলেন…সেসব গল্প মো ফারাহ বলেছেন প্রামাণ্যচিত্রটিতে।



২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের পর ২০১৬ রিও অলিম্পিকেও ৫ হাজার আর ১০ হাজার মিটারে সোনাজয়ী মো ফারাহ নিজের অতীতের গল্পটা নতুন করে বলেছেন নিজেই। এর আগে তাঁর অতীত সম্পর্কে ফারাহ বলেছিলেন, মা-বাবার সঙ্গে সোমালিয়া থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।

Through this documentary I have been able to address and learn more about what happened in my childhood and how I came to the UK. I'm really proud of it and hope you will tune into @BBC at 9pm on Weds to watch. pic.twitter.com/rqZe41gFm8

— Sir Mo Farah (@Mo_Farah) July 11, 2022
কিন্তু গতকাল প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রে জানালেন নতুন তথ্য, তাঁর বাবা-মা কখনো যুক্তরাজ্যে যানইনি। সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময়ে তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়, তাঁর মা ও দুই ভাই থাকেন সোমালিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সোমালিল্যান্ডে, যে দেশটি এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।

‘সত্যিটা হচ্ছে আপনারা আমাকে যেভাবে চেনেন, আমি তা নই। প্রায় সবাই আমাকে মো ফারাহ বলেই চেনেন, কিন্তু এটা আমার আসল নাম বা পরিচয় নয়’ – প্রামাণ্যচিত্রে ফারাহর স্বীকারোক্তি।

তাহলে তাঁর আসল গল্পটা কী? ৯ বছর বয়সে মধ্য আফ্রিকার দেশ জিবুতি থেকে শিশু ভৃত্য হিসেবে কাজ করার জন্য ফারাহকে পাচার করে নিয়ে আসেন এক নারী। সেই পাচারকারী নারীই হুসাইন আবদি কাহিন থেকে নাম বদলে ‘মো ফারাহ’ নাম দেন, যা কিনা ছিল অন্য আরেক পরিবারের সন্তানের নাম। ওই নারীর সঙ্গে আর কখনো দেখা হয়নি ফারাহর।

৯ বছর বয়সে তাঁকে পাচার করে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় ফারাহকে ওই নারী বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যে আত্মীয়দের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে। ওই নারী তখন ফারাহর ভ্রমণের জাল কাগজপত্র বানান। সে সময় কাগজপত্রে ফারাহর ছবির পাশে ‘মোহামেদ ফারাহ’ নাম লেখা দেখিয়ে ওই নারীই ফারাহ বলেন, যুক্তরাজ্যে গিয়ে নিজের নাম ‘মোহামেদ ফারাহ’ বলতে।

কিন্তু যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পরই ফারাহর কাছে যে কাগজে তাঁর সব আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নাম-ঠিকানা লেখা ছিল, সেই কাগজ নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন সেই নারী। ‘সেই মুহূর্তেই আমি বুঝতে পারি, আমি বিপদে পড়েছি’ – প্রামাণ্যচিত্রে বলেছেন ফারাহ।

ফারাহ জানালেন, যুক্তরাজ্যে তাঁকে গৃহস্থালী কাজকর্ম ও নিয়োগদাতার পরিবারের সন্তানদের দেখাশোনা করতে বাধ্য করা হয়। কেন? ‘মুখে খাবার পাচ্ছি, সেটা নিশ্চিত করতে। বেশিরভাগই দিনই এমন হতো যে আমি বাথরুমে গিয়ে কাঁদতাম’ – ফারাহর স্মৃতিচারণ।

সেই নারকীয় শৈশব থেকে বেরিয়ে অ্যাথলেটিকসে তাহলে কীভাবে এলেন ফারাহ? কৃতিত্ব প্রাপ্য ফারাহর শারীরিক শিক্ষক অ্যালান ওয়াটকিনসনের। ‘ওকে দেখে মনে হতো, শুধু শারীরিক শিক্ষা আর খেলাধুলার ভাষাটাই ও বোঝে’ – প্রামাণ্যচিত্রে ফারাহর শৈশবের দিনগুলো দেখার স্মৃতি জানালেন ওয়াটকিনস। ফারাহও বলছিলেন, ‘সবকিছু থেকে দূরে থাকতে একটা জিনিসই করতে পারতাম, সেটা হলো বাইরে বেরিয়ে দৌড়ানো।’

শেষ পর্যন্ত ওয়াটকিনসকে সবকিছু খুলে বলেন ফারাহ, ওয়াটকিনস তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সবকিছু জানান। ওয়াটকিনসই পরে ফারাহর ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। ২০০০ সালের ২৫ জুলাই ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পান ফারাহ। মাঝে মাঝে আসল মোহামেদ ফারাহর কথা মনে পড়ে ফারাহর, ‘প্রায়ই অন্য মোহামেদ ফারাহর কথা ভাবি আমি, যে ছেলেটার বদলে প্লেনে আমাকে ওঠানো হয়েছিল। আমি খুব করেই প্রার্থনা করি সে যেন ভালো থাকে।’

তা এতদিন পরে কেন নিজের অতীতের সত্যিকারের গল্পটা বলার ইচ্ছে হলো ফারাহর? কিংবদন্তি অ্যাথলেট কারণ হিসেবে জানালেন পরিবারের কথা, ‘কত দীর্ঘ সময় নিজের মধ্যে রেখেছিলাম সব। আমার জন্যও খুব কঠিন ছিল এটা, কারণ কেউই এমন অতীতের যন্ত্রণায় পুড়তে চায় না। আমার সন্তানেরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, ‘‘বাবা এটা কীভাবে হলো, ওটা কেন হলো?’’ সবকিছুরই উত্তর হয়তো খুঁজে নেওয়া যায়। কিন্তু এটা (এমন অতীত) নিয়ে প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকে না। সে কারণেই আমি নিজের গল্পটা বলতে চাইছি, কারণ আমি স্বাভাবিকভাবে সবকিছু অনুভব করতে চাই। কিছু একটা মনে চেপে বসে থাকার অনুভূতিটা চাই না।‘

ফারাহর স্ত্রী তানিয়া বলছিলেন, ২০১০ সালে তাঁদের বিয়ের আগে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ‘ওর গল্পে অনেক ফাঁক থেকে যাচ্ছে।‘ কিন্তু তিনি প্রশ্ন করে করে ফারাহকে ‘সব স্বীকারে বাধ্য করেছেন।‘ তখনই তানিয়াকে সব সত্যি বলে দেন ফারাহ।

এখন বিশ্বকে জানালেন। চারিদিক থেকে ফারাহ এ জন্য প্রশংসাও পাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের শরণার্থী কাউন্সিল চ্যারিটি টুইটে লিখেছে, ‘তাঁর হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যাওয়া গল্পটা বলার সাহস দেখানোর জন্য আমরা মো ফারাহকে অভিবাদন জানাই। তাঁর মতো এমন আরও অনেক গল্পের পেছনে যে মানবেতর বাস্তবতা আছে, সেটি তিনি তুলে ধরেছেন। শরণার্থীদের (দেশান্তরী হওয়ার ক্ষেত্রে) একটা নিরাপদ ও মানবিক একটা পথের গুরুত্ব কতটা সেটিও বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat