ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলায় বন্ধ করা অবৈধ ইটভাটার তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অদিদপ্তরের মহাপরিচালককে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
বন্ধ করা অবৈধ ইটভাটা আবার চলছে, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তার আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ অভিযোগের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত।
বায়ুদূষণ রোধে ‘অবৈধ ইটভাটা’ বন্ধ না করে প্রতিবেদন দিয়ে বলা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে। রিটকারী পক্ষ এমন অভিযোগ তুলে আবেদন করলে গত ২০ এপ্রিল পাঁচ জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তলব করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সে তলবে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দেন তারা।
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাঈনুল ইসলাম। আর ইটভাটা মালিকদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আনিক আর হক।
মনজিল মোরসেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ জেলা প্রশাসক আদালতে হাজির হয়ে তালিকা দিয়ে বলেছেন কোন জেলায় কতটি অবৈধ ইটভাটা আছে, কতটি তারা বন্ধ করেছেন। তারা বলছেন, ৯৫ শতাংশ অবৈধ ইটভাটা তারা বন্ধ করেছেন। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তালিকা দিয়ে বলেছেন, ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় ৪১১টি অবৈধ ইটভাটা আছে। তার মধ্যে ৬৫ শতাংশ বন্ধ করা হয়েছে। ’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘তাদের এই বক্তেব্যের প্রেক্ষিতে আদালতে আমি বলেছি, আগের দেওয়া হলফনামায় (ব্যাখ্যায়) তারা একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু দেখা গেছে বন্ধ করা ইটভাটাগুলো আবার চলছে। যে কারণে আমি বলেছি যে, এ নিয়ে নাটক চলছে। এই নাটক বন্ধ হওয়ার জন্য একটা যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আইনের বিধান অনুযায়ী কোনো ইটভাটার মালিককে যদি দুই বছরের সাজা দেওয়া হয় তাহলে আর সে মালিক অবৈধ ইটভাটা চালাবে না। কিন্তু তারা (জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর) সেটা না করে মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরবর্তীতে অবৈধভাবে ইটভাটা আবার চালু করে সেই ২০ হাজার টাকা আবার তুলে নেয় মালিকরা। যে কারেণ আমি বলেছি, বন্ধ করা ইটভাটার তালিকা দেওয়া হোক। আমরা অনুসন্ধান করে দেখি বন্ধ করা কোনো ইটভাটা চলছে কি না। যদি চলে তার দায়িত্ব তাদের (জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে) নিতে হবে। এ কথা শুনে আদালত বন্ধ করা অবৈধ ইটভাটার তালিকা চেয়েছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের তালিকা দিতে বলেছেন। '
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসকদেরও বলেছেন।
আদলতকে উদ্ধৃত করে এই আইনজীবী বলেন, 'আমরা পরিবেশ বাঁচাতে চাই। আর পরিবেশ বাঁচাতে চাইলে অবৈধ একটি ইটভাটাও থাকতে পারবে না। '
ঢাকায় বায়ুদূষণ ও অবৈধ ইটভাটা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে গত ৩০ জানুয়ারি একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সে আবেদনের শুনানির পর সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেলার (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ডাকেন হাইকোর্ট। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না থাকায় তাদের ডাকা হয়।
নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসকের পক্ষে আরডিসি অবৈধ ইটভাটার তালিকা নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালতে যুক্ত হন।
সেদিন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ আদালতে বলেন, অবৈধ ইটভাটার তালিকা আদালতে পাঠানো হয়েছে। ৩১৯টি ইটভাটা অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৯৫টি ইটভাটার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর গত ১ মার্চ অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আবার নির্দেশ দেন আদালত। এর মধ্যে পাঁচ জেলা প্রশাসক আদালতে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেন। এসব প্রতিবেদন মোট ১১৪টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধের কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর রিটকারী পক্ষ আদালতে অভিযোগ তোলে, বন্ধ করা ইটভাটা আবার চলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা এসংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আদেশ চাওয়া হয় ওই আবেদনে। গত ২০ এপ্রিল সে আবেদনের শুনানির পর পাঁচ জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তলব করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সে তলবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট আবেদন করা হয়। সে রিটের ধারাবাহিকতায় ঢাকা ও আশপাশের পাঁচ জেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ আসে।
এ জাতীয় আরো খবর..