রাষ্ট্র সংস্কারে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। তবে ভোটের প্রক্রিয়া ও সময় নিয়ে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে। এ নিয়ে আগামীকাল দলগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন। এর আগে আজ মঙ্গলবার আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এতে গণভোট আয়োজনের আইনি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শ বুধবার দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, গণভোট করতে গেলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে মঙ্গলবার (আজ) বৈঠক হবে। পরে দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে- কবে, কীভাবে ভোট হবে। আশা করি তারা এ বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নোট অব ডিসেন্টসহ একমত হলেও সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিমত ছিল। তৃতীয় ধাপে চতুর্থ পর্বের আলোচনায় গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও এনসিপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলেছে। আর জামায়াত চাইছে সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে গণভোটে সংস্কার বাস্তবায়ন হোক।
আওয়ামী লীগ আমলে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় আদালত আবার গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় এটি বাস্তবায়ন হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অবশ্য আশা করেছেন, আগামীকাল বুধবারই এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়ে যাবে। যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে তারা একাধিক পদ্ধতির সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এবারও যারা গণভোট চাইছে, তারা সবাই ‘জুলাই সনদের’ পক্ষের শক্তি। আবার সরকারও চাইছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হোক। ফলে গণভোট যখনই হোক, তা কেমন হবে, সেদিকে অনেকের দৃষ্টি থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গণভোট অধিকতর নিরাপদ হওয়ার সুযোগ থাকবে।
গত রবিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আগামীকাল দলগুলোর সঙ্গে ফের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ১৫ অক্টোবর শেষ হবে কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ। এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে দলগুলোর সাক্ষরসহ আনুষ্ঠিকতা শেষ করতে চায় ঐকমত্য কমিশন।