দুটি কয়লাভিত্তিক এবং একটি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে জমি কেনা, অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মোট ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতি হয়েছে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার। চট্টগ্রামের বাঁশখালী এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৫৫ কোটি টাকা এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন ওয়েবিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মাহ্ফুজুল হক ও গবেষণা ফেলো নেওয়াজুল মাওলা। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত প্রায় দেড় দশকে অভূতপূর্ব অর্জন হয়েছে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে। এটি ইতিবাচক দিক। তবে এর মধ্যে কিছু সুশাসনের চ্যালেঞ্জ আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। যা পেয়েছি, সেটি বেশ উদ্বেগজনক। ’
টিআইবি বলেছে, দুর্নীতির এই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিওকর্মী ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের পকেটে গেছে। গবেষণার সময়কাল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল। গবেষণাটি করতে গিয়ে সরকারি দপ্তর, স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভারত, চীন,পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩.৪৬ থেকে ৫.১৫ টাকার মধ্যে থাকলেও এই তিন প্রকল্পে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ রেখে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
টিআইবি বলেছে, অন্য দেশগুলোতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জমি ছিল ৮১ একর। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩১০ একর। বাঁশখালীতে দরকার ছিল ৩০৪ একর। জমি নেওয়া হয়েছে ৬৬০ একর। মাতারবাড়ীতে জমির প্রয়োজন ছিল ৪১৮ একর। কেনা হয়েছে এক হাজার ৩৫৮ একর।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে দাতানির্ভর নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। একদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই, অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অধিক দুর্নীতি এবং দ্রুত মুনাফা তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকায় প্রয়োজন না থাকলেও কয়লা এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..