প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার সাহসের উৎস জনগণ। তাদের সাহসে সাহসী হয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা মহামারি শুরুর পর গতকালই প্রথম সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মূলত পদ্মা সেতু নির্মাণ ও প্রতিবন্ধকতা এবং বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর কে কোন ভাষায় তাঁর সমালোচনা করেছিলেন, সেগুলোও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মানটা ফিরে এসেছে। আমাদের দেশের সবার একটা মানসিকতা ছিল যে আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারব না। এই যে একটা পরনির্ভরশীলতা, পরমুখাপেক্ষিতা—এটাই কিন্তু আমাদের মাঝে ছিল। একটা দৈন্য ছিল। বিশ্বব্যাংক যখন এই টাকাটা তুলে নিয়ে গেল, আমরা অন্তত সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। সেই অচলায়তন ভেঙে আমরা যে একটা আত্মমর্যাদাশীল জাতি, আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। ’
পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের দুঃখ প্রকাশ করার প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? বিশ্বব্যাংককে আমি কী দোষ দেব? তারা বন্ধ করল কাদের প্ররোচনায়? সেটা তো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছিল। এটাই তো বাস্তবতা। ...এটা তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে, যদি তাদের অনুশোচনা থাকে। আর না থাকলে আমার কিছু বলার নেই। আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং আমি ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এ জন্যই যে এই ঘটনাটি ঘটেছিল বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি। ’
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উৎসব সবাই করবেন কিন্তু প্রত্যেকে একটু ধৈর্য ধারণ করবেন এবং নিয়ম মানবেন এবং কোথাও কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন। যার যার জায়গা থেকে যেমনভাবে হোক এই উৎসবে সবাই শামিল হবেন; এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি, কাজেই সেভাবেই সবাই উৎসবে শামিল হবেন। ’
বিএনপির জন্য কান্নাকাটি করে লাভ নেই
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা (বিএনপি) কাকে (নেতৃত্বে) নিয়ে নির্বাচন করবে, বলতে পারেন? ওদের (বিএনপি) জন্য কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ওদের পুঁজিটা কী? বিএনপির কি একটাও যোগ্য নেতা নেই যাকে চেয়ারম্যান করতে পারে? তাহলেই তো (এখনকার মতো) দুরবস্থা হয় না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া একজন সামরিক শাসক। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যায় জড়িত। ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় এসে তাঁকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। সেই জিয়া বিএনপি গঠন করলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আমিই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সেটা করতে গিয়ে গ্রেনেড-বোমার মুখে পড়েছি। অনেক কষ্ট করেও গণতন্ত্র চর্চা করতে পেরেছি এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজ এ অবস্থায় আছি। ’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে কিভাবে ব্রিটিশ নাগরিক হলো, তার খোঁজ করেন। সেই খোঁজ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আমরা জনগণের শক্তি নিয়ে চলব
প্রভাবশালী একটি দেশের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবাধিকার আমাদের শেখাতে আসবে কারা? যারা খুনিদের আশ্রয় দেয়, আর যে দেশে প্রতিনিয়ত স্কুলে গুলি হয়ে ছাত্রছাত্রী মারা যায়, রাস্তাঘাটে পুলিশ গলায় পা দিয়ে মেরে ফেলে। তারা আমাদের কী মানবাধিকার শেখাবে? তবে হ্যাঁ, এগুলো নিয়ে তারা কথা বলবে আর আমাদের কিছু লোক এটা নিয়ে নাচবে। কিন্তু আমাদের যে আত্মবিশ্বাস আছে, আমরা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই চলব। জনগণের শক্তি নিয়ে চলব। বাংলাদেশ কোনো চাপের মুখে কখনো নতি স্বীকার করেনি, করবেও না। ’
সাংবাদিকরা ইউনূসের অর্থের খোঁজ করেন
মুহাম্মদ ইউনূস কোনো একটি মার্কিন ফাউন্ডেশনে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ দিয়েছিলেন—এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য সম্প্রতি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত হবে কি না জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনারাও তো তদন্ত করতে পারেন, কিন্তু করেন না। একজন ব্যাংকের এমডি হয়ে কোনো ফাউন্ডেশনে এত অর্থ কিভাবে দেন? আপনারা অনুসন্ধান করুন। আমি করতে গেলে তো আবার বলবেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাই আপনারা খুঁজে বের করলেই ভালো হয়। কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা সরিয়ে নিয়েছেন, সেগুলো খুঁজে বের করুন। কোনো ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট করে তার টাকা কিভাবে ব্যক্তিগত হিসাবে চলে যায়? এক চেকে ছয় কোটি টাকা তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করে, সেই টাকা উধাও (ভ্যানিশ) করে দেওয়া হলো। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশিদিন আগের কথা তো নয়। ২০২০ সালের কথা। অ্যাকাউন্ট নম্বর তো আছেই। আপনারা অনুসন্ধান করুন, তথ্য বের করুন। তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হলে আমরা নেব। ’
দাতা নয়, উন্নয়ন সহযোগী
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও বাংলাদেশের নামে বরাদ্দকৃত টাকা তারা ফেরত নিতে পারেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক কোনো অনুদান দেয় না। আমরা লোন নিই। যে টাকাটা বাংলাদেশের নামে স্যাংশন হবে, সেটা নষ্ট করার কোনো রাইট তাদের নেই। পদ্মা সেতু থেকে টাকা তারা বন্ধ করছে, কিন্তু ওই টাকা আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এই টাকা আমরা অন্যান্য প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পেরেছি। বিশ্বব্যাংক কোনো একটি দেশের একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দিলে দেশটি চাইলে অন্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে। এরা দাতা নয়। আমরা ভিক্ষা নিই না। ’
সেই ওকাম্পো এখন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে পর্যবেক্ষণে আসা বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদলের প্রধান লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো নিজেই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বন্যাঝুঁকির প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকির কথা তুলে ধরে সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বন্যা শুরু হয়েছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকিটা আমাদের থাকে, পানিটা নেমে আসবে দক্ষিণ অঞ্চলে। সে জন্য আগাম প্রস্তুতি আছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা আমরা পেয়েছি, কিন্তু এটা আমাদের মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এটা তো আর মানুষ ঠেকাতে পারে না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষের ক্ষতিটা যাতে না হয় সেটা আমাদের দেখা দরকার। ’
এ জাতীয় আরো খবর..