ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র এম১৪২ উচ্চগতিশীল আর্টিলারি রকেট সিস্টেম দিতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। এটি সংক্ষেপে এইচআইএমএআরএস নামেও পরিচিত।
মধ্যম পাল্লার এ রকেট ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনের কাছে কিয়েভের চাওয়া অস্ত্রের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ব্যবস্থা নতুন ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ প্যাকেজে থাকবে হেলিকপ্টার, জাভেলিন অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্রব্যবস্থা, কৌশলগত গাড়ি ও খুচরা যন্ত্রাংশ।
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক মতামতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ইউক্রেনীয়দের উন্নত রকেট সিস্টেম ও অস্ত্র দেবে যা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সহায়তা করবে।’
তবে তিনি কোনো সিস্টেম দেওয়া হবে তার নাম উল্লেখ করেননি।
এ সামরিক প্যাকেজটি স্থানীয় সময় বুধবার ঘোষণা করা হতে পারে। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এটি হতে যাচ্ছে ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম সামরিক সহায়তা।
এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
নতুন এ রকেট ব্যবস্থা কি
এইচআইএমএআরএস হচ্ছে চাকা লাগানো উচ্চ-প্রযুক্তি ও হালকা ওজনের রকেট লঞ্চার সিস্টেম। এর প্রতিটি সিস্টেম ছয়টি জিপিএস গাইডেড রকেট বহন করতে পারে। যা মিনিটের মধ্যে পুনরায় লোড করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের সেনারা বর্তমানে যেসব রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে নিশ্চিতভাবে তার চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য এইচআইএমএআরএস।
এ সিস্টেমের পাল্লা হচ্ছে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল)। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা এম৭৭৭ হুইটজারের চেয়ে এর পাল্লা দ্বিগুণ। যা মে মাস থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে।
তবে কতটা সিস্টেম ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র বুধবার সরবরাহ করার ঘোষণা দেবে এখনও তা পরিষ্কার নয়।
কেন এ রকেট সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ
পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে দূরপাল্লার কামান ব্যবস্থা চাইছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। শহর এলাকার চেয়ে এ অঞ্চল রক্ষা করা বেশি কঠিন বলে মনে করা হয়।
শনিবার, রুশ সেনারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এবং শান্তি আলোচনার আলোচক মিখাইলো পোডোলিয়াক আবারও বলেন, রাশিয়ার সক্ষমতার সঙ্গে পেরে উঠতে হলে দূর-পাল্লার অস্ত্র দরকার।
তিনি বলেন, ‘যখন আপনি ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আক্রমণের শিকার হবেন এবং পাল্টা হামলার জন্য আপনার কাছে কিছুই থাকবে না—এমন পরিস্থিতিতে লড়াই করা কঠিন। রাশিয়াকে আয়রন কার্টেনের পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে ইউক্রেন কিন্তু এ জন্য আমাদের কার্যকর অস্ত্র দরকার।’
এইচআইএমএআরএস ইউক্রেনের সেনাদের রাশিয়ার বর্তমান অবস্থানের আরও পেছনে হামলার সক্ষমতা দেবে। তারা হামলা চালাতে পারবে নিরাপদ দূরত্বে থেকেও।
রয়েল ইউনাইটে সার্ভিস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভানস বলেন, বৃহৎ পরিসরে বলতে গেলে, এইচআইএমএআরএস রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে ইউক্রেনের হামলার সক্ষমতা বাড়াবে। এ ছাড়া রাশিয়ার রসদ, কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে দূর-পাল্লার সিস্টেম, যা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য মস্কোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এতদিন অপেক্ষা করল যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে এমন অস্ত্র কিয়েভকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ পর্যন্ত রাশিয়ার অভ্যন্তরে চালানো ইউক্রেনের কোনো হামলাকে সমর্থন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ এইচআইএমএআরএস থেকে ছোড়া রকেট রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে যদি তা একেবারে সীমান্ত এলাকা থেকে ছোড়া হয়।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনীয়রা আশ্বাস দিয়েছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার ক্ষেত্রে এ সিস্টেম ব্যবহার করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনকে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম দেওয়া হবে না। এর পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার (১৮৬ মাইল)।
এদিকে রাশিয়ার বলছে, ইউক্রেনকে এইচআইএমএআরএস সরবরাহের সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন-কিয়েভের মধ্যে সরসারি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বুধবার ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটন ‘আগুনে ঘি ঢালছে’ বলে অভিযোগ করা হয় মস্কোর পক্ষ থেকে।
সূত্র: আলজাজিরা
এ জাতীয় আরো খবর..