×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১১-০৩
  • ২৪ বার পঠিত

রাজধানীর মিরপুরের ৩৫ বছর বয়সী গৃহবধূ সালমা বেগম প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর ফিরে আসে, এরপর দ্রুত রক্তচাপ কমে যায় এবং প্লাটিলেট বিপজ্জনকভাবে নেমে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিন দিন আইসিইউতে আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তিনি ৮ অক্টোবর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মারা যান।

একইভাবে, তিনবারের বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী (২৫) বিদেশে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে জ্বর দেখা দিলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেন। কিছুটা উন্নতির পর আবার জ্বর ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। পরদিনই আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মারা যান।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গুর ধরন আগের চেয়ে অনেক আক্রমণাত্মক। রোগীর শরীরে দ্রুত শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে এবং ফ্লুইড ব্যবস্থাপনায় সামান্য ত্রুটিও প্রাণঘাতী হতে পারে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান হোসেন মালিথা জানান, ‘এবারের ভ্যারিয়েন্ট সম্পূর্ণ আলাদা। তরুণরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে এবং আক্রান্ত হলে দ্রুত শক সিনড্রোমে চলে যাচ্ছে। প্রথম দফায় সামান্য জ্বর সেরে যাওয়ায় রোগীরা অসচেতন থাকছেন, কিন্তু শরীরের ভিতরে প্লাটিলেট ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন হঠাৎ কমে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৭০,৫১৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫১ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ।

চিকিৎসকরা আরও জানান, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত রোগীর ৬৮% ভর্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং ৪৬% ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসা ও যথাযথ ফ্লুইড ব্যবস্থাপনার অভাবই এই পরিস্থিতির মূল কারণ।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীর অনেকেই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত। প্রথমবারে সঠিক সময়ে ডায়াগনোসিস ও ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা না হলে দ্রুত শক দেখা দেয়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘এক্সপ্যান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে আক্রান্তদের লিভার, কিডনি ও হৃদযন্ত্র একসাথে আঘাত পাচ্ছে। শক চলে গেলে ফেরানো কঠিন।’

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সফটওয়্যার থাকলেও তা এখনও চালু হয়নি। এমআইএস বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অপারেশন প্ল্যান বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, শহর ও গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা চালু করা উচিত। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গুর আচরণ পরিবর্তনের কারণে আক্রান্ত হলেও সহজে বোঝা যায় না। প্রত্যন্ত এলাকায়ও পরীক্ষা সুবিধা থাকা আবশ্যক, যাতে গ্রামীণ জনগণ সহজেই পরীক্ষা করাতে পারে।’

ডেঙ্গুতে দ্রুত শনাক্তকরণ, যথাযথ ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।


নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat