বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করছে। এরাই বিদেশিদের পদলেহন করে ক্ষমতায় আছে আবার এরাই গলাবাজি করে বলে ক্ষমতার জন্য অন্যরা বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আজ রবিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ না। কিন্তু তিনি সিলেট মহানগর থেকে এমপি হয়েছেন কোন দলের টিকিটে? ওবায়দুল কাদের অনুমোদিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য কে? দেশবাসীসহ আমরা সবাই জানি তিনি এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে দেননি। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি ব্যবহার করেই বক্তব্য দিয়েছেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গুম-খুনের হোতাদের বিচার করতে রাজপথে নেমেছে দেশের মানুষ। মানবতাবিরোধী সরকারের পতন কেউ রুখতে পারবে না।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যখন দিশাহারা, খাবারের অভাবে সন্তানকে বিক্রি করতে বাজারে তুলছে মা, কন্যার স্কুলের বেতন জোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে বাবা, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, আর্থিক সংকটে বিদেশের ঋণ পেতে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অর্থমন্ত্রী, ঠিক সে সময়ে এইতো কয়দিন আগে এই মোমেন সাহেব বলেছিলেন, দেশের মানুষ তুলনামূলক বেহেশতে আছে। জনগণের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার তদবির নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ।
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ভারতের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকার এ হীন আকুতি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তে জড়িত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অঙ্গ বা কারো মক্কেলরাষ্ট্র নয়।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের আজ কী করুণ ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থা। আজ তারা জনগণকে বানিয়েছে প্রতিপক্ষ। জনগণের সঙ্গে তাদের শত্রুতা। জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার তারা স্বীকার করতে চায় না। তাই তারা বিদেশিদের কাছে দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে নিজেদের টিকে থাকার জন্য হাত প্রসারিত করেছে।
রিজভী বলেন, ২১ আগস্টের বোমা হামলার ঘটনা ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পিত ‘মাস্টারপ্ল্যান’। তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আসার পর তাদের দলের পছন্দ করা একজনকে আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) নিয়োগ করে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ নেতৃবৃন্দের নাম ঢুকানো হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, একেবারে পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বিএনপির নেতৃবৃন্দকে হেয় করার জন্য, বিএনপির সরকারকে হেয় করার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর সঙ্গে এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত আছে, তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভুরা জড়িত আছে।
তিনি বলেন, পরবর্তী পর্যায়ে মামলার যে প্রক্রিয়া, যে ভূমিকা, তাতে মনে হয়েছে যে ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী বা আওয়ামী লীগের কোনো পক্ষ জড়িত আছে। আপনি দেখেন, অনেক লোক ওখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কিছু হয়নি। তো এটাতেই প্রমাণিত হয় যে এটা একটা চক্রান্তমূলক ঘটনা ঘটানো হয়েছে বিএনপির ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করার জন্য।
তিনি বলেন, 'এটার তদন্ত আরো আগে শুরু হয়েছে। বুঝলাম বিএনপির আমলে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাই এটাকে তারা গ্রাহ্য করছে না। কিন্তু তাদের আন্দোলনের ফসল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন তারাও তদন্ত করেছেন এবং তারাও তো চার্জশিট দিয়েছেন। সেখানেও তো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অন্য নেতাদের নাম নেই। '
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ জাতীয় আরো খবর..