বেকারত্ব এবং দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে তরুণদের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ)।
প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনকল্পে দক্ষতা উন্নয়নে ৮ লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে যুগোপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে কাজ করছে সরকার।
বুধবার ঢাকা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ৬৬ শতাংশ। ২০৩০ সালে মধ্যে এ বয়সের জনসংখ্যা ৭০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং পরবর্তীতে তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে শুরু করবে। এ সুযোগ জাতীয় জীবনে বার বার আসে না। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সদ্ব্যবহারে উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি। বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকভাবে সফলতা অর্জন করে চলেছে।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও সম্পদশালী দেশে রূপান্তরের যে লক্ষ্য বর্তমান সরকার নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করতে হলে আমাদেরকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে আরও বেগবান করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বারা ত্বরান্বিত করতে দেশের বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করা যায়, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- এসব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।
বিদেশে দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে গেলে উপযুক্ত কাজের পাশাপাশি ভালো বেতনেরও নিশ্চয়তা মিলে। তাই বিদেশে ভালো কাজ ও উন্নত বেতনের জন্য অবশ্যই দক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এভাবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে দেওয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২০১৪ সাল থেকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে বিভিন্ন সেক্টরে ৮ লাখ ৪০ হাজার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে।
১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, চর ও হাওরসহ দুর্গম এলাকার আদিবাসীসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে (বেদে, সাপুড়ে, হিজড়া, সুইপার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ চলাকালে এসব জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ ভাতার পাশাপাশি কমপক্ষে এক লাখ মানুষকে বিশেষ বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারীদের চাকরি পেতে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারীদের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি খরচে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ওয়েল্ডিং, ড্রাইভিং, বিউটিফিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইন, ফ্রিজ-এসি মেরামত, প্লাম্বিং মেশন, গার্মেন্টস, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশনসহ ১৪০টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সুউচ্চ ম্যানেজার তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ, বুটেক্স, বিটাকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার উচ্চমানের দক্ষতা সম্পন্ন জনশক্তি তৈরিতে কাজ করে আসছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ও সেইপের প্রকল্প পরিচালক ড. মুহাম্মদ সরোয়ার জাহান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে রেহানা।
এ ছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা কর্মশালায় যোগদান করেন। কর্মশালায় কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামিং থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয় তুলে ধরে অন্যান্য তরুণদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দক্ষ মানব শক্তির বিকল্প নেই। তাই সরকার এডিবি ও অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় ফান্ড গঠন করে সারা দেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করেছে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় পুরুষের পাশাপাশি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়তা করছে। দেশের তরুণদের এ সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..