×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০৩
  • ৭৮ বার পঠিত
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ায় চলতি আমন ও পরবর্তী বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনে কৃষকের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত সোমবার থেকে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়। দেশে এখন প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে ধানের আবাদ হয়।

ফলে এই মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে চাল উৎপাদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর তথ্য মতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন হয়েছে প্রায় তিন কোটি ৫৮ লাখ টন।চলতি অর্থবছরে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে তিন কোটি ৬৩ লাখ টন হতে পারে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। কৃষক পর্যায়ে যদি এই পরিমাণ সারের ব্যবহার হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় এক হাজার ৫৯০ কোটি টাকা, প্রতি মণে যা প্রায় ১৬ টাকা। এ ছাড়া কৃষকের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া ছাড়াও সার্বিকভাবে দেশে চালের উৎপাদন কমে যেতে পারে। এর ফলে চালের আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকের খরচ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি)। আমনের তুলনায় বোরোতে সারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকের তুলনামূলক বেশি খরচ হবে।

এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাপী যখন সারের দাম কমার দিকে, তখন দেশে সারের দাম বাড়ানো মোটেও যৌক্তিক হয়নি। সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি আমন ও আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন কমতে পারে। আমন মৌসুমে বন্যার পর এখন তীব্র খরার কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। এরপর সারের মূল্যবৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক পর্যায়ে ধানের মূল্যবৃদ্ধি না করলে কৃষক চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষক নিরুৎসাহ হয়ে আগামী বোরো মৌসুমে আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন। ফলে দুই মৌসুমে উৎপাদন কমার কারণে খাদ্যঘাটতিতে পড়তে পারে দেশ। এতে বাড়তে পারে আমদানিনির্ভরতা। তাই সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করার সুপারিশ করছি।

সোমবার কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা থেকে ৩৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২২ টাকা করা হয়েছে। ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা থেকে ৪২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য সারের দাম অপরিবর্তিত রেখে ইউরিয়া সারের দাম ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে ছয় টাকা বাড়ানো হয়েছে।

তবে ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য মতে ইউরিয়া সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসছে। প্রতি টনের দাম এপ্রিল মাসে ছিল ৯২৫ ডলার, যা জুন মাসে ৬৯০ ডলারে নেমে আসে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সে জন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডিএপি ব্যবহার হতো আট লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন। ইউরিয়া সারের দাম বাড়ালে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। ফলে কৃষক পর্যায়ে খুব বেশি খরচ বাড়বে না। এ ছাড়া চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকমের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমন মৌসুম (জুলাই-সেপ্টেম্ব্বর) পর্যন্ত দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ছয় লাখ ১৯ হাজার টন, বিপরীতে বর্তমানে মজুদ রয়েছে সাত লাখ ২৭ হাজার টন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় এক লাখ টন বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউরিয়া সারের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বাড়িয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষক পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ানোর সব ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেটি বাস্তবায়ন করতে পারলে কৃষক পর্যায়ে খরচ খুব বেশি বৃদ্ধি পাবে না। ’

তবে সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, যখন ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে তখন তার সার্বিক উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য অনান্য সারের ব্যবহার কমিয়ে খরচটাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন কৃষক। এতে হিতে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এতে ভারসাম্যহীন সারের ব্যবহারের কারণে ধানের উৎপাদনশীলতা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat