শুটিংয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত জুন মাসে ছোট পর্দার সর্বোচ্চ সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) একটি নোটিশ দিয়েছিল। এক মাস না যেতে না–যেতেই শৃঙ্খলা ফেরাতে আবার নোটিশ দিয়েছে সংগঠনটি। সাধারণ মিটিং না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নির্মাতারাই। অনেক শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলীরা মনে করছেন, এতে এক শ্রেণি লাভবান হবে, অন্যরা মাশুল গুনবে। তবে সংগঠনটির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।
এফটিপিওর আগের নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সকাল ১০টায় শুটিং শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ১১টায়। শুটিং শুরুর সব প্রস্তুতি সকাল ১০টার আগেই শেষ করতে হবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিল্পীর অসুস্থতাসহ বিশেষ কারণে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ শেষ করা যাবে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ চাইলে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারবে।’ নতুন নোটিশে কর্মঘণ্টা একই রয়েছে। আগে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের বিষয়ে কিছু উল্লেখ ছিল না। এবার ক্ষতিপূরণের আর্থিক পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে সংগঠনটি।
নোটিশে তারা উল্লেখ করেছে, বাধ্য হয়ে ১২ ঘণ্টার বেশি শুটিং করলে নির্মাতা বা প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীসহ অন্যদের জরিমানা গুনতে হবে। এ ক্ষেত্রে পারিশ্রমিককে কর্মঘণ্টা দিয়ে ভাগ করতে হবে। কোনো শিল্পী দেরি করলে ঘণ্টা হিসেবে তিনি ক্ষতিপূরণ দেবেন। নোটিশে বলা হয়েছে, এই নিয়ম কার্যকর হবে পয়লা আগস্ট থেকে।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান নোটিশটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সেখানে মনজুরুল হাসান নামের একজন তরুণ নির্মাতা রওনককে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেছেন, ‘যেসব শিল্পী ও কলাকুশলীর দেরিতে শুটিং সেটে আসার কারণে পরিচালক–প্রযোজকের যে ক্ষতি হবে, তার একটা হিসাব করা দরকার। সেই অর্থ দেরিতে আসা ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় সাপেক্ষে আইন পরিবর্তন করে কার্যকর করুন।’ এমন প্রশ্নের উত্তরে রওনক লিখেছেন, ‘আপনার পরামর্শ নেতৃবৃন্দের কাছে জানাব। আর অব্যবস্থাপনা ও পরিচালকের দেরিতে আসায় ক্ষতি হলে সেটা আদায় করবে কে?’
রাত ১১টার অধিক বলতে কত সময়, সেটা নোটিশে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। পরিচালকেরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন না। দেশের ৯০ ভাগ নাটকের পুরো দায়িত্বে থাকেন পরিচালক একাই। তাঁদের অনেকে মনে করেন, দেরিতে আসা শিল্পী বা কলাকুশলীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে না পারলেও ক্ষতিপূরণ ঠিকই গুনতে হবে। নির্মাতা সকাল আহমেদ বলেন, নোটিশটা এখনো কার্যকর হয়নি। সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা মনে করেছেন, এই নিয়মে চলা উচিত। তবে এটা সাধারণ সভা করে কার্যকর করা উচিত। তিনি আরও বলেন, রাতে দেরি করলে যেমন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তেমনই সকালেও নির্মাতা, কলাকুশলী, লাইট থেকে শুরু করে যাঁর কারণে দেরি হবে, তাঁরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
আরেক নির্মাতা তুহিন হোসেন মনে করেন, এই নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নির্মাতারা। তিনি বলেন, কিছু সেলিব্রিটি দেরি করে এলেও ক্ষতিপূরণ চাওয়ার মতো সাহস কারও নেই। এখন তারকানির্ভর মিডিয়া। যে কারণে রাতে দেরি হলে নির্মাতাকেই বাধ্য হয়ে জরিমানা গুনতে হবে।
এফটিপিওর নতুন নোটিশ নিয়ে অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘১০টার শুটিং ইউনিটে পৌঁছাতে হলে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটায় বাসা থেকে বের হতে হয়। আবার রাত ১১টায় শেষ হলে ফিরতে রাত ১টা বাজে। পরের দিনের কাজের জন্য সুস্থতা কি আদৌ থাকে? পুরুষ শিল্পীদের জন্য এককথা কিন্তু আমরা যারা পরিবারের পরিচর্যা ও দায়িত্বে আছি, তারা? যদিও এসবের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করেই চলছে সব শুটিং।’
এই প্রসঙ্গে এফটিপিওর মহাসচিব সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘ওভার নাইট যেন শুটিং না হয়, সে জন্যই আমরা এই ক্ষতিপূরণ সিস্টেম চালু করেছি। শুটিং শেষ করতে হবে রাত ১১টার মধ্যেই। তবে যৌক্তিক থাকলে আলোচনার মাধ্যমে পরেও শুটিং করা যাবে।’ এদিকে চুক্তি না থাকায় সহকারী পরিচালকসহ বেশ কিছু কলাকুশলী বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক দিন ধরেই। দেরি করে আসা অনেক শিল্পীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করার সাহস নেই বলে জানিয়েছেন অনেক পরিচালকই। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এফটিপিও চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, ‘যাঁরা রাত দুইটায় শুটিং করেন, তাঁদের সঙ্গে সেভাবে পরিকল্পনা করে শুটিংয়ের দিন বাড়িয়ে নিন। সহকারী পরিচালকের নির্মাতাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করুক। সব আমাদের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..