দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) কনসোর্টিয়াম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, কঠিন বর্জ্যের দূষণে বস্তির ৩৪ শতাংশ মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন। আর ময়লা পানি ব্যবহারের কারণে ২৭ শতাংশ ও জলাবদ্ধতার কারণে ১৯ শতাংশ বস্তিবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় রাজধানীর বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত।
সংবাদ সম্মেলনে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডিএসকে ঢাকা কলিং প্রজেক্টের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মইনুদ্দীন আহমদ, ডিএসকে’র ওয়াস প্রকল্পের পরিচালক এম এ হাকিম প্রমুখ।
সাংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলে মাত্র এক শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা চাই এই বরাদ্দ অন্তত দুই শতাংশ করা হোক।
তিনি আরো বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার জাতীয় বাজেটে সরাসরি কোনো বরাদ্দ দেয় না। মন্ত্রণালয়গুলো থেকে এসংক্রান্ত কিছু প্রকল্প দেওয়া হয়। এই খাতে পৃথক বাজেট বরাদ্ধ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলন উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে একযোগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের নিজ নিজ কর্ম পরিসরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য দুর্ভোগ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তি এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলো উদ্যোগ নিতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
আরো বলা হয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলোতে জনস্বাস্থ্য অনুপস্থিত। এটি শুধুমাত্র বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এই দায়িত্বের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে যৌথ পরিকল্পনা ও মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে বিদ্যমান আইনগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সাধারণ নাগরিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনে সরকারকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..