×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-১৪
  • ৬২ বার পঠিত
চলাচলের জন্য আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হচ্ছে পদ্মা সেতু। এ সংবাদে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে বইছে আনন্দ। জেলার সর্বস্তরের মানুষ আশা করছে, পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যবসা-বণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিশেষ করে এই জেলায় ব্যাপকভাবে উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া ও শীতলপাটি যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।


এতে ভীষণ খুশি কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ঝালকাঠি থেকে ঢাকা যেতে আগে সময় লাগত ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর লাগবে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা।
ব্যবসা-বাণিজ্য আর কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জেলা ঝালকাঠির পেয়ারা, আমড়া ও শীতলপাটি দেশ-বিদেশে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার উত্পাদিত পেয়ারা ও আমড়া এত দিন নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। আর ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে এই জেলায় বেশির ভাগ পণ্য আসত এই নদীপথেই। ফেরিতে আটকা পড়া, পণ্য পচে যাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় এত দিন যোগাযোগব্যবস্থা ছিল দীর্ঘ সময়ের। পদ্মা সেতু চালুর পর এসব প্রতিবন্ধকতার অবসান হবে।

ঝালকাঠিতে ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় পেয়ারা। সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদাসকাঠি, খাজুরা, মিরাকাঠি, ডুমুরিয়া, জগদিশপুর, খোদ্রপাড়া, পোষণ্ডা, হিমানন্দকাঠি, বেতরা, কাপড়কাঠিসহ ২০টি গ্রামে রয়েছে দেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। প্রতিবছর এসব বাগানে পাঁচ কোটি টাকার পেয়ারা উত্পাদিত হয়। যাতায়াতব্যবস্থা ভালো না থাকায় এত দিন প্রতি মণ পেয়ারা মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হতো। চাষিরা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে এত দিন যাত্রীবাহী লঞ্চে রাজধানীতে পাঠাতেন পেয়ারা। এতে সময় যেমন বেশি লাগত, তরতাজা ফলটি অনেক সময় পেকে যেত। এতে বিক্রেতারা পড়তেন বিপাকে। পদ্মা সেতু চালুর পর চাষিরা দ্রুত সড়কপথে পণ্যটি রাজধানীতে পৌঁছাতে পারবেন। সড়কপথে খরচও হবে কম। এতে লাভবান হবেন চাষিরা।

এ জেলার আরেকটি ফল আমড়া। লাভজনক হওয়ায় ঝালকাঠিতে কৃষকরা ঝুঁকছেন আমড়া চাষে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর চাষিরা অন্তত ২৫ কোটি টাকার আমড়া বিক্রি করেন। এ কারণে ঝালকাঠিতে দিন দিন আমড়ার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এত দিন যাত্রীবাহী লঞ্চে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো ফলটি। এতে চাষিরা প্রত্যাশিত লাভ পেতেন না। পদ্মা সেতু চালুর পর তুলনামূলক কম খরচে এবং অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে আমড়া। চাষিরা নিজেরাই তা পৌঁছাতে পারবেন। প্রয়োজন হবে না আর মধ্যস্বত্বভোগীর।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঝালকাঠি জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৪৭০ জন কৃষক আমড়ার চাষ করেন। এখান থেকে বছরে ৯ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আমড়ার ফলন পাওয়া যায়। ফলটি থেকে কৃষক যে ২৫ কোটি টাকা আয় করছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি, ডহরশংকর ও গোপালপুর এবং নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার শীতলপাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করে। এই গ্রামগুলোকে ‘শীতলপাটির’ গ্রামও বলা হয়। এখানকার শত শত হেক্টর জমিতে রয়েছে পাইত্র্যাগাছের বাগান। বছরজুড়ে এই গ্রামগুলোয় শীতলপাটি, নামাজের পাটি ও আসনপাটি তৈরি করা হয়।

প্রতিটি পাটি বিক্রি করা হয় পাঁচ শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। । প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে (বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস) প্রচুর শীতলপাটি বিক্রি হয়। এই জেলায় তৈরি শীতলপাটি থেকে বছরে আয় ১০ লাখ টাকা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শীতলপাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এত দিন কারিগররা পণ্যটি পাইকারি বিক্রি করে দিতেন। এতে লাভ হতো কম। পদ্মা সেতু চালুর পর কারিগররা সরাসরি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যটি পৌঁছে দিতে পারবেন। এতে তাঁদের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়ে যাবে এবং দামও বেশি পাবেন।

সদর উপজেলার ভিমরুলী পেয়ারা বাগানের মালিক ভবেন্দ্র নাথ হাওলাদার বলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা, নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ পেয়ারা ও আমড়ার চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই তিন ইউনিয়নের পেয়ারা ও আমড়া চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন। বাগান থেকে প্রতিদিন সকালে পেয়ারা ও আমড়া সংগ্রহ করে দুপুরের মধ্যেই ট্রাকযোগে ঢাকায় পৌঁছে দিতে পারবেন। ক্রেতারাও পাবেন সতেজ পেয়ারা ও আমড়া। আর প্রতিবছর ঝালকাঠি সদরের ভিমরুলী খালে ভাসমান পেয়ারার বাজার এবং পেয়ারা বাগান দেখতে হাজার হাজার পর্যটক আসে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই পর্যটকের সংখ্যা আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে।

ডুমুরিয়া গ্রামের আমড়া চাষি সুনীল হালদার বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর চাষ করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর আমড়া চাষের সঙ্গে জড়িতরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।

রাজাপুর উপজেলার ডহরশংকর গ্রামের অসীম চন্দ্র দে (৩৭) বলেন, ‘শীতলপাটি তৈরির পর পাইকারদের কাছে বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চলে আমাদের। পদ্মা সেতু চালুর পর নিজেরাই ঢাকায় নিয়ে পাটি বিক্রি করতে পারব। পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় আমাদের ব্যবসা প্রসারিত হবে। আমাদের আর না খেয়ে থাকতে হবে না। ’

ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ঝালকাঠি জেলার ব্যবসায়ীদের জন্য পদ্মা সেতু মহা আর্শীবাদ। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার। সময়ও কমবে কয়েক ঘণ্টা। ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা এতে বেশ উপকৃত হবেন।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। ঝালকাঠি থেকে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব। মানুষের দীর্ঘদিনের একটি চাওয়া পূরণ হতে চলেছে। এর ফলে এই এলাকার কৃষিপণ্য সহজে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। এ অঞ্চলে শিল্প-কলকারখানা বাড়বে। সব শ্রেণির মানুষের উপকার হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat