আর মাত্র ২৪ দিন বাকি। ২৫ জুন চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। উদ্বোধনকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকারের মূল আয়োজন থাকবে পদ্মার দুই পাড়ে। আর আওয়ামী লীগ এবার তাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে পদ্মা সেতু যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশে ২৩ জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যুগপৎভাবে পালন করবে আওয়ামী লীগ।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সেতু এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। এরপর গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সেতুতে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে, সেতুর বাইরে আছে আরও প্রায় ২০০ বাতি। সেতুর দুই পাড়ে স্থাপিত বিদ্যুতের উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ল্যাম্পপোস্টগুলোয় প্রতিটি বাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হবে। জুনের মাঝামাঝি পুরো সেতুতে আলো জ্বলবে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে ১৮টি উপকমিটি গঠন করেছে সেতু বিভাগ। সব কটি কমিটি প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছে। এর মধ্যে আমন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটি আমন্ত্রণ কার্ডের নকশা ও সজ্জার কাজ শুরু করেছে। মনোরম ভেন্যু, সাজসজ্জা, আসন ব্যবস্থাপনা ও অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে আলাদা কমিটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনী থাকবে। অতিথিদের দেওয়া হবে উপহার-স্যুভেনির। অতিথিদের মাওয়া ও জাজিরা—দুই পাড়েই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দুই পাড়েই একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকে এই প্রকল্প দেশে-বিদেশে আলোচিত। এ জন্য অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ওই দিন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় অংশ নেবেন। এটি অবশ্য দলীয় সমাবেশ। এর জন্য ইতিমধ্যে ঢাকা ও পদ্মার দুই পাড়ের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা যৌথ সভা করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মাদারীপুরের সমাবেশ সফল করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি পালন করা হবে, এর সবকিছুতেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ছাপ থাকবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে আজ বুধবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করবেন।
পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। ভেতর দিয়ে যাবে ট্রেন। ২৫ জুন যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। রেল চালু হবে আরও পরে।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
২০১৪ সালের শেষ দিকে মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ শুরু হয়। এর আগে সংযোগ সড়ক, টোলপ্লাজা নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের দিকে।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..