জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন নুরুজ্জামান খান নামে এক পোশাককর্মী।নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তিনি একটি ভিডিও ধারণ করে বক্তব্য দেন, যেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে ধারণকৃত ভিডিওতে নুরুজ্জামানকে ক্ষোভ আর আক্ষেপ প্রকাশ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে তিনি বলেন, এখানে (বঙ্গবন্ধুর সমাধি) শুধু দেখলাম মন্ত্রী, মিনিস্টার তারাই শুধু। আর তাদের কিছু লোক আর শুধু প্রশাসন। তারাই কি দেশের সবকিছু? তারাই কি শুধু দেশে ভূমিকা রাখে? আমাদের কি কিছুই ভূমিকা নাই? সরকার নিজে বলেছে, ৮০ শতাংশ অর্থ আয় হয় গার্মেন্টস থেকে। গার্মেন্টস পোশাক শ্রমিকদের শ্রম দিয়ে। তাদের ভূমিকা কোথায় গেল? তাদের অধিকার চাই, তাদের স্বাধীনতা চাই।
নুরুজ্জামান ভিডিও বক্তব্যে বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। আমার কথার দাম দিতেও পারেন নাও দিতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, বিষয়টা একদম ছোটখাটো না, বিষয়টা অনেক জটিল। স্বাধীন দেশে আমরা যদি মনের আবেগ প্রকাশ করতে না পারি, দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মতো লাগতেছে। এতকিছু থাকতেও মনে হচ্ছে কিছুই নাই। যেখানে আমার সম্মান নাই, আমার স্বাধীনতা নাই।
ভিডিওতে তিনি বলেন, জাতির পিতা সবার পিতা সমতুল্য। তাই তার ডাকে সবাই সাড়া দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কিন্তু বন্ধু হিসেবে তাকে সম্মান দিতে পারলাম না। ফজরের নামাজ পড়ে বেশি টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে এসেছি। এ কষ্টের দাম কে দিবে? এ ত্যাগ স্বীকার কার জন্য? জাতির পিতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি মিথ্যা? নাকি আরও কিছু করে দেখাতে হবে? আমার পিতা শুধু একটি সংসার দেখেছেন। জাতির পিতা সবার সংসার দেখেছেন। পুরো দেশের জন্য জান (জীবন) দিয়েছেন। জাতির পিতার প্রতি আমাদের এই ভালোবাসা কি মিথ্যা? আমার আর বলার মতো ভাষা নাই। কষ্টে আমার বুক ফাইট্টা যাইতেছে।
নুরুজ্জামানের স্বজনেরা গণমাধ্যমকে জানান, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল না দিতে পেরে ফিরে আসার সময় পদ্মা সেতুতে অবস্থানকালে নুরুজ্জামান খান এই ভিডিও বক্তব্য দেন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থান থেকে রেলিং টপকিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি।
এদিকে মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, নিখোঁজ নুরুজ্জামানকে উদ্ধারে নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। পদ্মা সেতুর ৮ নম্বর পিলার থেকে ২৬ নম্বর পিলারের চারপাশে খোঁজ করা হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীর বিভিন্ন অংশে তল্লাশি চলছে।
তিনি আরও জানান, নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এ ঘটনায় গাড়িচালক ও সহযোগী যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ জাতীয় আরো খবর..