×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-২১
  • ৬৪ বার পঠিত
জ্বালানি সাশ্রয়ে মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং। সরকারের পক্ষ থেকে দিনে একবার এক ঘণ্টা করে লোড শেডিং দেওয়ার কথা বলা হলেও রাজধানীসহ সারা দেশেই একাধিকবার লোড শেডিং করা হচ্ছে। তবে রাজধানীতে সর্বোচ্চ দুইবার লোড শেডিং হলেও রাজধানীর বাইরে বেশির ভাগ জেলায় এক ঘণ্টা করে তিন-চারবারের বেশি লোড শেডিং হচ্ছে। এতে ক্ষোভ জানাচ্ছে গ্রাহকরা।

এদিকে এত দিন গ্যাসের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি হলেও আবাসিকে গ্যাসসংকট ছিল না। গতকাল থেকে লোড শেডিংয়ের সঙ্গে তীব্র হতে শুরু করেছে আবাসিকের গ্যাসসংকটও। এতে রান্নাবান্নায় সমস্যা হচ্ছে। আবাসিকের পাশাপাশি সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানাও চাহিদা অনুসারে গ্যাস কম পাচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) উৎপাদনও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ ছিল বলে জানা গেছে। রামপুরার বাসিন্দা মো. হিমেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় সকাল ও দুপুরে বাসায় রান্না করা হয়নি। বাধ্য হয়ে বাইরে খেতে হয়েছে। একদিকে লোড শেডিংয়ের ভোগান্তি, অন্যদিকে গ্যাসসংকটে চুলায় জ্বলছে না আগুন। ’

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মোট চাহিদা প্রায় এক হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। বর্তমানে গড়ে পাচ্ছি এক হাজার ৬২৬ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। বিদ্যুৎকেন্দ্রে তো রেশনিং করাই হচ্ছে, সিএনজি আগেই রেশনিংয়ের আওতায় ছিল। এখন আবাসিকের কিছু এলাকা গ্যাস কম পাচ্ছে। তবে এটি সাময়িক সমস্যা। ’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল এলএনজিসহ পেট্রোবাংলা গ্রিডে সরবরাহ করেছে দুই হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং হচ্ছে দেশের বৃহত্তর বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এলাকাগুলোতে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পেয়ে দিনে কোনো কোনো জেলায় তাদের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্তও লোড শেডিং করতে হচ্ছে।

আরইবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আরইবির ৮০টি সিমিতির পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক শিডিউল করা হয়েছে। কিন্তু শিডিউল মেনে লোডশেডিং করার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আজ (গতকাল) বিকেলেও আমাদের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোড শেডিং ছিল। সন্ধ্যার দিকে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের বেশি। ’

তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং ছিল। আজ (গতকাল) আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোড শেডিং করা হয়েছে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে। ’

রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিডিউলের বাইরে একবারের বেশি লোড শেডিং দিচ্ছি না। যদি কোথাও একাধিকবার লোড শেডিং হয়ে থাকে সেটা বিতরণ লাইনের সমস্যার কারণে হচ্ছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আজ ডিপিডিসির বিতরণ এলাকায় চাহিদা ছিল এক হাজার ৪৮০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরেছি এক হাজার ৩৪৫ থেকে এক হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। লোড শেডিং ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ মেগাওয়াটের মতো। ’

ময়মনসিংহ নগরীতে গড়ে চার ঘণ্টার লোড শেডিং করা হচ্ছে। লোড শেডিংয়ের ঘোষণা আসার পরপরই ময়মনসিংহ নগরীতে লোড শেডিং আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। গতকাল নগরীর একাধিক স্থানে তিন-চার ঘণ্টা লোড শেডিং করা হয়েছে। এর মধ্যে এক ঘণ্টা করে লোড শেডিং করা হয়েছে কমপক্ষে দুইবার। এদিকে এক ঘণ্টার লোড শেডিংয়ের জন্য নাগরিকরা প্রস্তুত থাকলেও বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অনেকে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সিলেটের বিয়ানীবাজারে লোড শেডিং করা হচ্ছে গড়ে ১২ ঘণ্টা। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই এলাকায় এক ঘণ্টা করে মোট ছয় ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের কথা বলা হলেও বিয়ানীবাজার উপজেলায় গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন কাটাতে হচ্ছে অধিবাসীদের।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা। ]

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat